ত্বকের যত্নে আমরা কতকিছুই না ব্যবহার করি! বিশেষ করে আমাদের যাদের তৈলাক্ত ত্বক; আমরা অয়েল কন্ট্রোল করার জন্য ইন্টারনেট ঘেঁটে, গুগল করে কত ধরণের টিপস সংগ্রহ করি আর ফলো করি। যদিও বা কিছু কিছু টিপস ঝড়ে বক মারার মতন কাজ করে। কিন্তু অধিকাংশই বিফলে যায়! অনেকসময় এসব টিপস ফলো করতে গিয়ে আমরা ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলি। তাহলে অয়েলি স্কিনের অতিরিক্ত তেলতেলেভাব কন্ট্রোল করবেন কীভাবে?
আজকে আমি কিছু কার্যকরী টিপস নিয়ে লিখবো যেগুলো সঠিকভাবে ফলো করলে আপনার ফেইসের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কন্ট্রোল হবে, আর স্কিন ড্যামেজ হওয়ারও কোনো আশংকা থাকবে না!
অয়েলি স্কিনের অতিরিক্ত তেলতেলেভাব কমানোর টিপস
সময় নষ্ট না করে চলুন জেনে নিই কিছু প্রয়োজনীয় টিপস, যেগুলো অয়েলি স্কিনের অতিরিক্ত তেলতেলেভাব কন্ট্রোলে সাহায্য করবে।
দৈনিক ২ বেলা ত্বক পরিস্কার করা
মুখ তো নয়, যেন তেলের খনি! ঘুম থেকে উঠলেই আমরা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা আছি, আমাদের ফেইসে হাত দিলেই এরকম ফিল করি, তাই না? অয়েল কন্ট্রোল করার প্রথম জাদুমন্ত্র হচ্ছে, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে শুধুমাত্র ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ না ধুয়ে একটি অয়েল কন্ট্রোল ফেইসওয়াশ কিংবা ডেইলি ক্লেনজার দিয়ে ত্বক পরিস্কার করে নেয়া।
সারাদিন শেষে ঘুমাতে যাবার আগে আরও একবার ত্বক ক্লিন করে নেয়া। এতে করে আপনার ত্বকের অয়েল প্রোডাকশন অনেকটাই কমে আসবে! অয়েল কন্ট্রোল করার জন্য আমি ২টি ফেইসওয়াশ সাজেস্ট করবো।
লাইলাক ব্রাইটেনিং ফেইসওয়াশ অয়েলি টু কম্বিনেশন স্কিন (LILAC Brightening Face Wash Oily And Combination Skin)
আপনার বাজেট যদি একটু কম থাকে তবে সেক্ষেত্রে লাইলাক ব্রাইটেনিং ফেইসওয়াশ অয়েলি টু কম্বিনেশন স্কিন বেস্ট অপশন হতে পারে।
কেন আমি পছন্দ করি-
- এতে আছে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল এবং উইচ হ্যাজেল যা আপনার স্কিনকে রিফাইন করে ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- অ্যাক্টিভেটেড ব্যাম্বু চারকোল স্কিনের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা শোষণ করে স্কিনকে ডিপ ক্লিন করে। স্কিনে ডিপ ক্লিনড ফিল আনে।
- স্কিন ডিটক্সিফাই করে।
- স্কিন এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড করে।
- উইচ হ্যাজেল একনে কমাতে হেল্প করে।
- অ্যালকোহল এবং প্যারাবেন ফ্রি।
- হালাল এবং ডার্মাটোলোজিস্ট দ্বারা পরীক্ষিত।
কজারেক্স লো পিএইচ গুড মর্নিং জেল ক্লেনজার (COSRX Low Ph Good Morning Gel Cleanser)
এছাড়াও আমার পছন্দের আরেকটি ফেইসওয়াশ হলো কজারেক্স লো পিএইচ গুড মর্নিং জেল ক্লেনজার।
কেন আমি পছন্দ করি-
- সারাদিনের জন্য ময়েশ্চার লক করে রাখে। কোন রকমের ড্রাই ফিল হয় না।
- মাইল্ড অ্যাসিডিক পিএইচ। ৫ থেকে ৬ এর মধ্যে থাকে।
- এতে আছে টি ট্রি অয়েল যা স্কিনের তেল কন্ট্রোল করে। পোর সাইজ ছোট করে।
- ন্যাচারাল বিএইচএ(BHA) সমৃদ্ধ যা স্কিন টেক্সচার ইমপ্রুভ করতে হেল্প করে।
- জেল টাইপ টেক্সচার।
এছাড়াও তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে আরও অনেক ধরণের ফেইসওয়াশ আছে যা আপনি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে আমি সাজেস্ট করবো; বাজেট বেশি থাকলে কজারেক্স লো পিএইচ গুড মর্নিং জেল ক্লেনজার একবার হলেও ট্রাই করে দেখুন।
টোনার ব্যবহার করুন
তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে বশে আনার পরবর্তী অত্যাবশ্যকীয় ধাপ হচ্ছে আপনার স্কিনের সাথে মানানসই টোনার ব্যবহার করা। এছাড়াও এটি রেগুলার ও বেসিক স্কিনকেয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপও বটে! টোনার আপনার ত্বকের অয়েল প্রোডাকশন কমাতেও হেল্প করে। এছাড়াও টোনার ব্যবহার করে আপনি আরও অনেক ধরণের বেনেফিট পেতে পারেন। অয়েলি স্কিনের অয়েল কন্ট্রোল করতে যে টোনারটি আমি সাজেস্ট করবো-
রাজকন্যা অল পারপাস টোনার (Rajkonna All Purpose Toner)
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আমার সবচেয়ে পছন্দের টোনার হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্যাসে তৈরি রাজকন্যা অল পারপাস টোনার। নাম দেখেই বুঝে ফেলেছেন নিশ্চয়ই যে এই টোনারটি কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। এতে আছে হোয়াইট টি, গাঁদা ফুল, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের নির্যাস।
কেন আমি পছন্দ করি-
- এই টোনারে আছে হোআইট টি; যা ত্বকের মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে আনে ফলে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সানবার্নও কমাতে হেল্প করে।
- গাঁদা ফুলের নির্যাস তৈলাক্ত ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স করে পাশাপাশি আপনার যদি ওপেন পোর এর সমস্যা থাকে তবে সেই সমস্যাও অনেকটা নির্মূল হবে।
- চন্দ্রমল্লিকা ফুলের নির্যাস ত্বকের পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করে।
- একটি টোনারেই এতগুলো বেনেফিট পেয়ে যাবেন! তাই আমি মনে করি; অয়েলি স্কিনের অয়েল কন্ট্রোল করতে এই টোনার একটি বেস্ট অপশন।
ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন
যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী তাদের মনে একটি ভুল ধারণা আছে; সেটি হলো তৈলাক্ত স্কিনে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করলে বুঝি আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে যাবে। আপনাদের মনে যদি এই ধারণা থেকে থাকে তবে এখনই তা ঝেড়ে ফেলে দিন! সব ধরণের স্কিনেই ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা জরুরি। অবশ্যই ত্বকের ধরণ বুঝে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করবেন।
দা বডিশপ সিউইড অয়েল কন্ট্রোল জেল ক্রিম (The Body Shop Seaweed Oil Control Gel Cream)
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযোগী অনেক ধরণের ময়েশ্চারাইজার কিনতে পাওয়া যায়। তবে এগুলোর মধ্যে আমার পছন্দের ময়েশ্চারাইজারটি হলো দা বডিশপ সিউইড অয়েল কন্ট্রোল জেল ক্রিম।
কেন আমি পছন্দ করি-
- এটি খুবই লাইটওয়েট টেক্সচার।
- তৈলাক্ত ত্বকের অয়েল কন্ট্রোল করে।
- খুব দ্রুত ত্বকে শোষিত হয়।
- ত্বককে ময়েশ্চারাইজড করে।
- স্কিনকে হেলদি, স্মুথ এবং সফট রাখে।
- তৈলাক্ত ত্বকের উপযোগী, খুব ভালোভাবে স্যুট করে যায়।
এছাড়াও আপনার বাজেট কম থাকলে পন্ডস লাইট ময়েশ্চারাইজার নন-অয়েলি ফ্রেশ ফিল ট্রাই করে দেখতে পারেন।
ত্বকে ফেইসমাস্ক ব্যবহার করুন
কিছু মাস্ক আছে যা আপনার ত্বকের অয়েল প্রোডাকশন কন্ট্রোল করতে সাহায্য করে। যেমনঃ মুলতানি মাটির মাস্ক। ঘরোয়া রূপচর্চায় মুলতানি মাটি হতে পারে চটজলদি সমাধান।
রাজকন্যা মুলতানি মাটি (Rajkonna Multani Mati)
বাজারে অনেক ধরণের মুলতানি মাটি কিনতে পাওয়া যায়। তবে, আমার পছন্দের মুলতানি মাটি হলো রাজকন্যা মুলতানি মাটি। কারণ এটি-
- ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে।
- ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস ক্লিন করে।
- আপনার ত্বকে একনে স্পট বা ব্লেমিশেস থাকলে তা দূর করবে।
- ত্বকের সকল প্রকার ইমপিউরিটিস ও ডেড স্কিন সেলস দূর করে।
আপনিও চাইলে ১০০% পিউর রাজকন্যা মুলতানি মাটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটির সাহায্যে কয়েকটি ফেইসপ্যাক তৈরি করতে পারবেন। আমি ২টি ফেইসপ্যাক সম্পর্কে বলব।
প্যাক-১
এটি তৈরি করতে আপনার মুলতানি মাটি, শশার রস ও গোলাপজল লাগবে।
ব্যবহারবিধি-
- পরিমাণমত মুলতানি মাটি, শশার রস ও গোলাপজল একটি বাটিতে নিয়ে মিশিয়ে ফেলুন।
- ১০-১৫ মিনিট আপনার ফেইসে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিতে পারেন।
- কোনো উপাদানে এলার্জি থেকে থাকলে সেই উপাদানটি বাদ দিবেন।
প্যাক-২
এটি তৈরি করতে মুলতানি মাটি, গোলাপজল কিংবা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহারবিধি-
- পরিমাণমত মুলতানি মাটি, গোলাপজল কিংবা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার একটি বাটিতে নিয়ে মিশিয়ে ফেলুন।
- ১৫ মিনিট ত্বকে রাখার পোর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
আরও কিছু টিপস যা অবশ্যই মেনে চলবেন
আরও কিছু টিপস যা ফলো করলে আপনার অয়েলি ফেইসের অয়েল কন্ট্রোল করতে পারবেন। সেগুলো হলো –
তেলেভাজা চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন
তেলেভাজা, প্রসেসড খাবার, মিষ্টিযুক্ত বেভারেজ আপনার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। প্রচুর পরিমাণে সবজি, ফল ও লিন প্রোটিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন।
বুঝেশুনে মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন
অয়েল বেইসড মেকআপ প্রোডাক্ট কিনবেন না এবং ব্যবহার করবেন না। ওয়াটার বেইসড মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
ওয়ার্কআউট
প্রতিদিন এক্সারসাইজ কিংবা ওয়ার্কআউট করুন। এটি দেহের রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে ত্বকের কোষগুলোকে সজীব করে তোলে। এছাড়াও বন্ধ হয়ে থাকা রোমকূপকে খুলে ত্বকের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায়, অয়েলি ফেইসের অয়েল কন্ট্রোল করবেন কীভাবে তা জানতে পেরেছেন। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য হেল্পফুল হবে। অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস কিনতে আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ছবি- সাজগোজ
The post অয়েলি স্কিনের অতিরিক্ত তেলতেলেভাব কন্ট্রোল করবেন কীভাবে? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/2Y02zKg
0 comments: