স্কিন কেয়ারের প্রাথমিক ধাপ হলো সি টি এম- অর্থাৎ ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং। শুধু এই তিনটি ধাপ মানতে পারলেই স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সুন্দর ত্বক পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সাধারণত ক্লেনজিং আর ময়েশ্চারাইজিং এর মধ্যেই আমাদের স্কিন কেয়ার সীমাবদ্ধ। টোনিং এর ধাপটি কমবেশি সবাই এড়িয়ে যায়। অথচ সুস্থ, মসৃণ ত্বক পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ টোনিং। আবার অনেকেই নিজের ত্বক সম্পর্কে জানেন না। তাই ত্বকের ধরন সম্পর্কে জেনে কোন টোনার বেছে নিতে হবে সেটা নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন তৈরি হয়। আজকের আর্টিকেলে এ কনফিউশনগুলো ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো।
টোনার কী?
সহজ ভাষায় বললে, টোনার দেখতে পানির মতো। আবার এর কাজও ঠিক পানির মতোই। কিন্তু একে পানি ভেবে ভুল করবেন না যেন! এর মূল উপাদান হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। টোনারের ধরনের উপর ডিপেন্ড করে এতে অ্যাসিড, গ্লিসারিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ থাকে। স্কিনের সারফেস থেকে ডেড সেলস রিমুভ করে অল্প সময়ে হাইড্রেশন ফিরিয়ে আনতে হেল্প করে টোনার। স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনারের গুরুত্ব সিরাম আর ময়েশ্চারাইজারের মতোই।
কেন টোনার ব্যবহার করবেন?
সাবান বা ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর টোনার ব্যবহার করতে হয়। এটি ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখার সাথে সাথে ত্বকের পিএইচ লেভেলও ব্যালেন্স রাখবে। পিএইচ হলো পটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন যা ত্বকের অ্যালকালাইনের মাপকাঠি। আমাদের ত্বকে পিএইচ সাধারণত ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত থাকে, যা স্কেল অনুযায়ী অ্যাসিডিক। এই ন্যাচারাল স্কিন অ্যাসিডিটি ত্বককে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। আর এই পিএইচের ব্যালেন্সের উপর নির্ভর করে আমাদের ত্বকের সুস্থতা। টোনার পিএইচের এই ব্যালেন্সটাই ঠিক রাখে। এছাড়া এটি ত্বকের পোরস মিনিমাইজ করে। এতে একনে হওয়ার পসিবিলিটি কমে যায়। স্কিনে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে বলিরেখা পড়া রোধ করে।
নিজের ত্বক সম্পর্কে জানুন
হেলদি স্কিন পেতে টোনার ইউজ করা জরুরি এটা তো জানলাম। কিন্তু সব ধরনের স্কিনে কি একই ধরনের টোনার ইউজ করতে হয়? মোটেও না! টোনার ব্যবহার করার জন্য সবার আগে নিজের ত্বক সম্পর্কে জানতে হবে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি কোন ত্বকের অধিকারী?
শুষ্ক ত্বক বা ড্রাই স্কিনঃ এ ধরনের ত্বকে ছোট ছোট পোরস দেখা দেয়, স্কিন অনেক বেশি টাইট আর নিষ্প্রাণ হয়। আবার অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক শীতকালে ফেটে যায়। যদি আপনার ত্বকও এমন হয়, তাহলে আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী।
তৈলাক্ত ত্বক বা অয়েলি স্কিনঃ এ ধরনের স্কিনে অয়েলের পরিমাণ বেশি থাকে। সাথে স্কিনের পোরস বড় হয়।
মিশ্র ত্বক বা কম্বিনেশন স্কিনঃ ড্রাই ও অয়েলি স্কিনের কম্বিনেশন হয় এ ধরনের ত্বক। কম্বিনেশন স্কিনে টি-জোন (নাক, চিন ও কপাল) হয় তৈলাক্ত আর মুখের বাকি অংশ হয় শুষ্ক। ত্বকে ছোট ছোট পোরস থাকে।
সংবেদনশীল ত্বক বা সেনসিটিভ স্কিনঃ এ ধরনের ত্বকের মূল সমস্যা জ্বালাপোড়া করা। বিশেষ করে বিউটি প্রোডাক্টস ব্যবহারে ত্বকে এক ধরনের জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়, ত্বক লাল হয়ে যায়, চুলকানি দেখা দেয়।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী কী ধরনের টোনার বেছে নেবেন?
হেলদি স্কিন পেতে ত্বকের যত্নে অ্যাসেনশিয়াল একটি আইটেম হলেও সব স্কিনে একই টোনার ব্যবহার করা যাবে না। জেনে নিন আপনার ত্বকের জন্য কোন টোনারটি উপযুক্ত-
ড্রাই স্কিনের জন্য
শুষ্ক ত্বক অর্থাৎ ড্রাই স্কিনের জন্য হাইড্রেটিং ও ময়েশ্চারাইজিং টাইপ টোনার বেছে নিতে হবে। পেপটাইড, গ্লাইকোলিপিড, রোজ হিপস সিড অয়েল (Rosa Canina নামে গোলাপ গাছের ফল ও বীজ প্রেস করে তৈরি করা তেল) অথবা জোজোবা অয়েল সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহার করা উচিত। অ্যালকোহল, সোডিয়াম বা অ্যামোনিয়াম লরিল সালফেট (নারিকেল বা পাম বীজ থেকে পাওয়া ফ্যাট মলিকিউল) আছে এমন টোনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
অয়েলি স্কিনের জন্য
স্কিন যদি অয়েলি হয়, তাহলে ফেইসে রিফ্রেশিং ফিল দেবে এমন টোনার ব্যবহার করতে হবে। টোনার কেনার আগে দেখে নিতে হবে সেগুলোতে অয়েল ফ্রি উপাদান যেমন সোডিয়াম হায়ালুরোনেট, সোডিয়াম পিসিএ এবং এএইচএ উপাদানগুলো আছে কিনা। অ্যালকোহল অথবা সালফেট আছে এমন টোনার ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এ ধরনের টোনার ত্বক আরো বেশি তৈলাক্ত করে দেয়।
কম্বিনেশন স্কিনের জন্য
এ ধরনের ত্বক হলে আপনাকে বেছে নিতে হবে দুই ধরনের টোনার। একটি গরমকাল এবং অন্যটি শীতকালের জন্য। গরমকালে ব্যবহার করতে হবে অয়েল ফ্রি রিফ্রেশিং টোনার, শীতকালে বেছে নিতে হবে হাইড্রেটিং টোনার।
সেনসিটিভ স্কিনের জন্য
সেনসিটিভ স্কিন হলে ব্যবহার করতে হবে অ্যালকোহল এবং অ্যাসিডিক ফ্রি টোনার। কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন টোনারটি বিটা গ্লুকার, হোয়াইট টি এক্সট্র্যাক্ট, গ্লিসারিন সমৃদ্ধ কিনা।
টোনার কেনার সময় যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেন
১) টোনারের উপাদানগুলো পড়া
টোনার কেনার সময় লেভেল ভালো করে পড়ুন। তাহলে আপনি জানতে পারবেন টোনারটি কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি। এতে ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় টোনারটি বেছে নিতে পারবেন।
২) হার্শ ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত টোনার না কেনা
ত্বক যেমনই হোক না কেন যে সকল টোনারে অ্যালকোহল, মেনথল, হ্যাজেল আছে সেগুলো কেনা থেকে বিরত থাকুন।
৩) বেশি ফ্রেগ্রেন্সযুক্ত টোনার না কেনা
লেবু অথবা গোলাপ ফুলের তীব্র গন্ধযুক্ত টোনার কেনা থেকে বিরত থাকুন। এই ধরনের টোনার ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
৪) টোনার বাছাই করুন ভালো কোনো কসমেটিকসের দোকান থেকে
কম দামী টোনার না কিনে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্র্যান্ডের টোনার কিনুন। টোনার কেনার আগে অবশ্যই ভালো করে লেভেল পড়ে নিন। ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে এমন উপাদানযুক্ত টোনার না কেনাই ভালো।
ব্যবহারের নিয়ম
১) স্কিন টাইপ অনুযায়ী ক্লেনজার দিয়ে স্কিন ভালো করে ক্লিন করে নিন।
২) একটা কটন প্যাডে কয়েক ফোঁটা টোনার নিয়ে আস্তে আস্তে পুরো ফেইসে অ্যাপ্লাই করে নিন।
৩) টোনার হাতে নিয়েও ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, হাত যেন একদম ক্লিন থাকে। নইলে হাত থেকে ময়লা বা জীবাণু ফেইসে লেগে ত্বকে অনেক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৪) বাজারে এখন স্প্রে বোতলযুক্ত টোনার পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করা আরও সহজ। স্কিন ক্লিন করার পর ২-৩ বার স্প্রে করে নিবেন। টোনার ব্যবহারের ৩০-৪০ সেকেন্ড পর স্কিন কেয়ারের পরবর্তী ধাপ, যেমন- সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন।
এই তো জেনে নিলেন, ত্বকের ধরন অনুযায়ী কেমন টোনার বেছে নিবেন সে বিষয়ে তথ্য। স্কিন কেয়ারের যে কোনো প্রোডাক্টের জন্য সাজগোজ আমার ভরসার জায়গা। অথেনটিক যে কোনো স্কিন, হেয়ার ও মেকআপ রিলেটেড প্রোডাক্ট অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের চারটি আউটলেট- যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার এবং উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে) থেকে কিনতে পারেন।
ছবিঃ সাজগোজ
The post ত্বকের ধরন সম্পর্কে জেনে স্কিনকেয়ারে অ্যাড করুন পারফেক্ট টোনার! appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/3qCVSlR
0 comments: