স্কিন কেয়ারে কত ধরনের প্রোডাক্টই তো ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি এক্সট্রা কেয়ারের জন্য এবং মেডিকেল পারপাসে বিভিন্ন বিউটি টুলসও ব্যবহার হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই! যেমন- গুয়াশা এবং জেড রোলার। বডি ও ফেইস ম্যাসাজের জন্য জেড রোলার এখন ভীষণ হাইপড। বিউটি ট্রেন্ডে জেড রোলার এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এই বিউটি টুলস স্কিন কেয়ারে কতটা ইফেক্টিভ এবং কীভাবে ইউজ করতে হবে, সেটা নিয়েই আজকে আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।
চলুন আগে ইতিহাস জেনে আসি
Gua sha ও jade roller কে প্রাচীন টুলস বলা হচ্ছে, তাহলে নিশ্চয়ই এর কোনো ইতিহাস আছে! তাই না? চীনের মানুষদের ত্বক অনেক সুন্দর, এটা একবাক্যে তো সবাইকে স্বীকার করতেই হবে। এর কারণ কিন্তু রূপচর্চায় ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন রকম পাথর। প্রাচীন চৈনিক বিশ্বাস অনুযায়ী এই জেড স্টোন রোলার কিন্তু কোনো সাধারণ পাথর নয়। গ্রিন জেড বা কোয়ার্টজ পাথর দিয়ে তৈরি হয় জেড স্টোন রোলার। প্রাচীন জেমস স্টোন থেকে গুয়াশা এবং জেড রোলার তৈরি হয় বলে এগুলো গুণে ও মানে সেরা। গুয়াশা এবং জেড রোলার ফেইসের পাশাপাশি বডিতেও ব্যবহার করা হয়।
বিউটি ট্রেন্ডে জেড রোলার ও গুয়াশা
বডি ও ফেইস ম্যাসাজের জন্য বিউটি টুলসের উপকারিতার জন্যই দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। কী কী বেনিফিটস দিতে পারে এগুলো, চলুন এক নজরে দেখে নেই।
- মুখের ফোলাভাব বা পাফিনেস কমায়
- বডিকে রিল্যাক্সড রাখতে জেড রোলার ভালো কাজ করে
- ব্লাড সার্কুলেশনও ইম্প্রুভ করতে জেড রোলার ও গুয়াশা সাহায্য করে
- প্রিম্যাচিউর এজিং প্রিভেন্ট করে মানে ফাইন লাইনস, রিংকেলসও কমিয়ে আনে
- স্কিনে হেলদি গ্লো ও ব্রাইটনেস ফিরে আসে
- লিমফ্যাটিক ড্রেনেইজে (lymphatic drainage) সাহায্য করে
লিমফ্যাটিক ড্রেনেইজ নিয়ে কিছু তথ্য
প্রথমেই বুঝতে হবে লিম্ফ নোডস ও ড্রেনেইজ কী? লিম্ফ নোডস তো আমাদের ফুল বডিতেই রয়েছে। আর এই নোডসগুলোর ভিতর দিয়ে ফ্লুইড চলাফেরা করে। লিম্ফ নোডস গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি বহন করে, যা আমাদের ইম্যুনিটি সিস্টেমকে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সাথে ফাইট করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন ফ্লুইডগুলো আটকে থাকে, তখনি ইম্যুনিটি ব্রেকডাউন করে এবং আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমরা যদি ফ্লুইডকে চলাফেরা করার জন্য সাহায্য না করি, তাহলে কিন্তু ফ্লুইড একটা জায়গায় আটকে থাকবে না। এক্ষেত্রে জেড রোলার বা গুয়াশা ব্যবহার করলে ফ্লুইডগুলো মুভ করতে পারে।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন ড্রেনিং পার্ট কীভাবে কাজ করে? আমরা যখন ম্যাসাজ জেড রোলার বা গুয়াশা দিয়ে করি, নোডসগুলোর মাধ্যমে সব টক্সিনগুলো নিচের দিকে নেমে যায়। আর টক্সিনগুলো জমে থাকলে একনে দেখা দেয়। তাই জেড রোলার বা গুয়াশা দিয়ে ম্যাসাজ করলে জমে থাকা টক্সিনগুলোকে স্প্রেড আউট হয়। এতে করে স্কিন ডিটক্সিফাইং (Detoxifying) হয়, এতে একনে ব্রেকআউটও কমে যায়।
ম্যাসাজ কীভাবে করবেন?
জেড রোলার বা গুয়াশা অ্যাপ্লাই করার আগে টোনার, সিরাম বা ফেসিয়াল অয়েল, ময়েশ্চারাইজার ফেইসে অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। ফেসিয়াল অয়েল হিসেবে আমন্ড অয়েল, জোজোবা অয়েল বা আরগান অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। আর খেয়াল রাখতে হবে যেন টুলসগুলো যেন পরিষ্কার থাকে। প্রথমেই বলে নিচ্ছি ম্যাসাজে আপনি যেই জেড রোলার বা গুয়াশা যেইটাই ব্যবহার করেন না কেন, ম্যাসাজের টেকনিক কিন্তু সেইম।
চোয়াল (Jawline)
চোয়ালের নিচ থেকে উপরের দিকে ম্যাসাজ করতে হবে। এই সময় একটি আঙ্গুল মাঝখানে ধরে রাখতে হয়।
গাল (Checkbone)
গালে (checkbone) যখন ম্যাসাজ করবেন তখন গুয়াশার সাইড দিয়ে কানের সাইডে হালকা প্রেশার দিতে হবে। কানের সাইডের পয়েন্টে ম্যাসাজ করলে এটা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে।
চোখ (Eye Area)
চোখের এরিয়া সব থেকে বেশি সংবেদনশীল, তাই জেন্টল ওয়েতে ম্যাসাজ করতে হবে। জেড রোলার ব্যবহার করলে ছোট অংশ দিয়ে ম্যাসাজ শুরু করতে হবে এবং কপালের (temple) পয়েন্টে গিয়ে প্রেশার দিতে হবে। আমাদের টেনশন থেকে যে মাথাব্যথা হয় তা এই পয়েন্ট থেকেই কমে আসবে। আর চোখের ক্লান্তি কমে গেলে তখনই চোখের ফোলাভাব, ভাঁজ, কালো দাগ অনেকটাই কমে আসবে।
কপাল (Forehead Area)
মাথাব্যথা কমাতে এই ম্যাসাজটা অনেক সাহায্য করবে। কপালের মাঝ থেকে শুরু করে দুই সাইড দিয়ে একইভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।
কাঁধ (Shoulder Area)
এখন কাঁধে জেড রোলার বা গুয়াশা দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। গুয়াশার ইউ-U দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই কানের কাছাকাছি গিয়ে একটা প্রেশার দিতে হবে, এতে অনেক রিল্যাক্সড ফিল করবেন।
ঘাড় (Around The Neck)
ঘাড়ে এভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। ঘাড়ের মাঝামাঝি পয়েন্টে গিয়ে প্রেশার দিতে হবে, এতে রিল্যাক্স ফিল করবেন, টেনশন কমে আসবে।
কলারবোন (Collarbone)
কলারবোন, ক্ল্যাভিকল বোনে একইভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। ক্ল্যাভিকল বোনে ম্যাসাজ করালে ডাবল চিনও কমে আসবে।
দিনে কতবার ব্যবহার করতে হবে?
স্কিন কেয়ারে প্রতিদিনই জেড রোলার বা গুয়াশা ব্যবহার করতে পারবেন। এই টুলগুলো ব্যবহারে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট খুব সহজে স্কিনের ডিপ লেয়ারে প্রবেশ করতে পারে। যেমন- শিট মাস্ক বা কোনো মাস্ক আপ্লাই করে জেড রোলার বা গুয়াশা দিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে পারেন। আর ব্যবহার করার আধা ঘণ্টা আগে এটি ফ্রিজে রেখে দিন। এতে করে আরও রিল্যাক্স ফিল করবেন। আর টুলসগুলো কিন্তু স্কিনে ধীরে ধীরে কাজ করে, তাই ধৈর্য ধরে ব্যবহার করতে হবে।
দেখতে এক হলেও সব জেড রোলার কিন্তু অরিজিনাল নয়!
আজকাল মার্কেটে অনেক কম প্রাইসে জেড রোলার বা গুয়াশা দেখতে পাবেন। ‘এত কম দামে পাওয়া গেলে কেন দাম দিয়ে কিনবো? একটা পাথরই তো!’ এই কথাটা আমি নিজেও আগে ভাবতাম। কিন্তু অথেনটিক পাথরের একটু দাম বেশি হয়, আর এর কাজও কিন্তু অসাধারণ। বেনিফিট পেতে হলে আপনাকে অরিজিনাল স্টোনের টুলস বেছে নিতে হবে। দেখতে সেইম হলেও ফেইক স্টোন আপনাকে সুফল দিতে পারবে না, খুবই সিম্পল ব্যাপার! তাই ঠিক জায়গায় ইনভেস্ট করুন। এই ক্ষেত্রে অথেনটিক গুয়াশা বা জেড রোলার পেয়ে যাবেন সাজগোজে।
বডি ও ফেইস ম্যাসাজের জন্য বিউটি টুলস কেন এত জনপ্রিয়, সেটা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারলেন! বিউটি ট্রেন্ডে জেড রোলার ও গুয়াশা হাইপড শুধুমাত্র এর গুণাবলির জন্য। রোলার কখনোই উপর থেকে নিচের দিকে নয় বরং নিচ থেকে উপরের দিকে টানবেন। আজকে তাহলে এই পর্যন্তই। বিভিন্ন অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস এর জন্য শপ.সাজগোজ.কম আমার ভরসার জায়গা। তাদের দুটি ফিজিক্যাল স্টোর আছে সীমান্ত সম্ভার আর যমুনা ফিউচার পার্কে, সেখানে গিয়ে দেখে শুনেও কিনে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার বা মেকআপ প্রোডাক্ট। আর অ্যাপস ডাউনলোড করেও কিন্তু সহজেই নিজের পছন্দের পণ্য কিনে নিতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ
The post বিউটি ট্রেন্ডে জেড রোলার ও গুয়াশা কেন এত জনপ্রিয়? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/328tG8e
0 comments: