Monday, April 21, 2025

ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার পেছনে দায়ী যে অভ্যাস

রিনা একজন চাকরিজীবী নারী। সম্প্রতি তার ঘাড় ও পিঠে ব্যথা দেখা দিয়েছে। সারাদিন অফিসের কম্পিউটারে বসে কাজ করার পর বাসায় ফিরে ঘরের কাজ সেরে বিনোদনের জন্য হাতের কাছের মোবাইলে সোশ্যাল মিডিয়াকে বেছে নেন। মোবাইলের স্ক্রিনের সামনে কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায় টের পান না।

প্রথমে সামান্য ঘাড় ব্যথা দিয়ে তাঁর অস্বস্তির শুরু। ধীরে ধীরে পিঠে ব্যথা ও টান অনুভব করেন। ক্রমশ মাথা ভার হয়ে আসে। কাজের চাপে এসব হচ্ছে ভেবে খুব একটা দুশ্চিন্তা তার ছিল না। কিন্তু একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তিনি আর ঘাড় নাড়াতে পারছেন না। ঘাড় শক্ত হয়ে গেছে, বাঁকাতে গেলেই ব্যাথা পাচ্ছেন। চিন্তিত হয়ে রিনা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন।

ফিজিওথেরাপিস্ট তাকে দেখে জানান যে, তার সমস্যাটা খুব সাধারণ — কিন্তু অবহেলা করলে ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, দীর্ঘ সময় মোবাইল বা ল্যাপটপে ঝুঁকে থাকার ফলে দেহভঙ্গি বা posture নষ্ট হয়ে গেছে। এমনটা হলে মানুষ কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়। যেমন-

১) টেক্সট নেক সিনড্রোম (Text Neck Syndrome)

২) সারভাইক্যাল পেইন (Cervical Pain)

৩) ফ্রোজেন শোল্ডার (Frozen Shoulder)

৪) মেরুদন্ডের ডিস্কে সমস্যা

চিকিৎসক আরো জানান দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে ঝুঁকে থাকার কারণে শরীরে সাধারণত যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়, সেগুলো হচ্ছে —

১) ঘাড় ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া

২) পিঠ বা কোমর ব্যথা

৩) কাঁধে টান

৪) হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ বা অবশ ভাব

৫) চোখের ক্লান্তি

৬) মাথা ব্যথা

৭) শরীরে দূর্বলতা

৮) ঘুমের ব্যাঘাত

৯) মুড সুইং

এক্ষেত্রে চিকিৎসক তাকে কিছু পরামর্শ দেন। যেগুলো বেশ সহজ কিন্তু কার্যকর। চলুন জেনে আসি সেগুলো কী।

ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হলে করণীয় কী?

১। শরীরের অবস্থান ঠিক রাখা 

কাজ করার সময় চেয়ার-টেবিলের উচ্চতা ঠিক রাখুন।

মোবাইল বা ল্যাপটপ চোখের সমান উচ্চতায় রাখুন।

২। নিয়মিত বিশ্রাম নেয়া

প্রতি ৩০-৪০ মিনিট কাজের পর ১-২ মিনিট চোখ বন্ধ করুন বা দাঁড়িয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন।

৩। নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন 

ঘাড়, পিঠ, কাঁধ, কোমড় এবং হাত ও পায়ের সহজ স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন।

বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করবেন।

৪। গরম বা ঠান্ডা সেক নিন 

ব্যথা হলে উষ্ণ বা ঠান্ডা পানির সেক নিতে পারেন।

৫। পর্যাপ্ত পানি পান ও ঘুমের প্রয়োজন 

দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

রাতে যেন পর্যাপ্ত ঘুম হয় সে ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বন করুন।

৬। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা 

প্রয়োজন অনুযায়ী আলট্রাসাউন্ড থেরাপি,ম্যানুয়াল থেরাপি বা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষ এক্সারসাইজ করতে পারেন।

৭। মানসিক চাপ কমানো

মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, মেডিটেশন বা নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন।

চিকিৎসকের গাইড লাইন মেনে চলার পর, মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে রিনার জীবন ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু করে। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও এক্সারসাইজ করার ফলে তার ব্যথা কমে আসে। ঘাড়, পিঠ ও কাঁধের জড়তা কমে যায়। সবচেয়ে বড় কথা এখন তিনি সচেতন। বুঝতে পারেন প্রযুক্তি থাকবে, কাজও থাকবে কিন্তু নিজের শরীরের যত্ন সবার আগে।

এই যুগে মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়, তবে নিজের যত্ন নেওয়া সম্পূর্ণ আপনার হাতে। সময় থাকতে সচেতন না হলে সামান্য সমস্যা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

আপনিও যদি এমন সমস্যা অনুভব করেন তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের গাইড লাইন মেনে চলুন। দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

মনে রাখবেন, শরীর যদি ঠিক না থাকে — কোনো কাজ বা সাফল্যই আনন্দের মনে হয় না। তাই সময় থাকতে নিজের যত্ন নিন। সুস্থ থাকুন।

ছবি- সাটারস্টক

The post ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হওয়ার পেছনে দায়ী যে অভ্যাস appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/IXkdDG7
Previous Post
Next Post

0 comments: