অনেক সময়ই দেখা যায় যে পানিতে সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট এর ফেনা ভালোভাবে তৈরি হতে চায় না বা হলেও কম হয়। আবার শ্যাম্পু করার পরও চুল কেমন যেন আঠালো হয়ে থাকে অথবা কিছুক্ষণ পর ফ্রিজি হয়ে যায়। অনেকের তো শাওয়ারের সময় হেয়ার ফলও হয়। এর একটি কারণ হতে পারে হার্ড ওয়াটার (খর পানি)। খেয়াল করেছেন কি, অনেক সময় ট্যাপের পানি থেকে কেমন যেন কড়া স্মেল আসে? শাওয়ারের সময় হার্ড ওয়াটার আপনার চুল পড়া ও চুলের রুক্ষতা বাড়িয়ে দিচ্ছে না তো? চলুন আজ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
হার্ড ওয়াটার আসলে কী?
সাধারণত পানিতে কিছু মিনারেল বা খনিজ উপাদান দ্রবীভূত অবস্থায় পাওয়া যায়, যা থাকে একটি সহনীয় মাত্রায়৷ কিন্তু যখন এই মিনারেলসের মধ্যে কিছু উপাদান নরমাল রেঞ্জের থেকে বেশি পরিমাণে পানিতে থাকে, তখন সেটিকে খর পানি বা হার্ড ওয়াটার বলা হয়। এক কথায় হার্ড ওয়াটার হলো খনিজ সমৃদ্ধ পানি যাতে জারক (যেমন ধনাত্নক চার্জযুক্ত ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম) এর পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়াও আয়রনের বিভিন্ন আয়ন দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে, সেই সাথে থাকতে পারে ডার্ট, ইমপিওরিটিস ইত্যাদি।
কীভাবে এটি চুলের ক্ষতি করে?
হার্ড ওয়াটারে থাকা জারকগুলো মূলত ধনাত্নক চার্জযুক্ত বা ক্যাটায়ন, চুলের ঋনাত্নক চার্জকে এই ধনাত্নক চার্জ আকর্ষণ করে যখন পানির সংস্পর্শে আসে৷ চিরন্তন সত্য এই যে সবসময়ই ক্যাটায়ন অ্যানায়নকে আকর্ষণ করে, ফলে চুলের উপরিভাগ থেকে অ্যানায়নের স্তর সরে যায় এবং প্রোটিন লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে চুলের আগা ফাটা, রুক্ষতা, ব্রেকেজ এই ধরনের প্রবলেম হতে পারে। এছাড়াও খর পানিতে থাকা বিভিন্ন দূষিত পদার্থ হেয়ার ফলিকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক সময় স্ক্যাল্প ইরিটেশন, অতিরিক্ত হেয়ার ফল, বিল্ড আপের সমস্যাও দেখা দেয়।
সরাসরি স্কিনে তেমন প্রভাব না ফেললেও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ত্বকেরও ক্ষতি হতে পারে। এই হার্ড ওয়াটার থেকে চুলকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়, সেই উপায়গুলো এখন জানাবো।
করণীয় কী তাহলে?
১. ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পুর ব্যবহার
হেয়ার শ্যাফটে ও স্ক্যাল্পে জমে থাকা ইমপিওরিটিস, মিনারেলস, প্রোডাক্ট বিল্ডআপ খুব ভালোভাবে ক্লিন করতে উইকলি হেয়ার কেয়ারে অ্যাড করুন ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু। হার্ড ওয়াটারের ক্ষতি থেকে চুল সুরক্ষিত রাখার জন্য ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু একটি মাস্ট হ্যাভ প্রোডাক্ট। এই শ্যাম্পুগুলোতে রেগুলার শ্যাম্পুর তুলনায় হাই অ্যামাউন্টে সারফেকট্যান্টস বা ক্লেনজিং এজেন্ট থাকে। কিন্তু রেগুলার বেসিসে এটি ইউজ করা ঠিক নয়, কারণ খুব ঘন ঘন ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ব্যবহার করা হলে স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েলও রিমুভ হয়ে যেতে পারে।
২. শাওয়ার ফিল্টারের ব্যবহার
এখন মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের শাওয়ার ফিল্টার পাওয়া যাচ্ছে যা হার্ড ওয়াটার থেকে আপনার স্কিন ও হেয়ারকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম। সেডিমেন্ট ফিল্টার, RO ফিল্টার, ইলেক্ট্রিক RO ফিল্টার সহ আরো অনেক ধরনের শাওয়ার ফিল্টার পাওয়া যায়। তবে কিছুদিন পর পর এই ফিল্টার ক্লিন করতে হবে।
৩. কন্ডিশনার ও লিভ ইন কন্ডিশনার এর ব্যবহার
ফ্রিজিনেস ও ড্যামেজ প্রিভেন্ট করতে অবশ্যই শ্যাম্পুর পর চুলে কন্ডিশনার অ্যাপ্লাই করতে হবে। উইকে অন্তত একবার ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। হার্ড ওয়াটারের ক্ষতি থেকে চুলকে রক্ষা করতে লিভ ইন কন্ডিশনারও ব্যবহার করা যায় । কন্ডিশনার হেয়ার কিউটিকল স্মুথ রাখতে হেল্প করে।
৪. স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েশন
সপ্তাহে একবার স্ক্যাল্প এক্সফোলিয়েট করতে পারেন। আমাদের বডি যে ন্যাচারালি ডেড সেলস রিপ্লেস করে এটা তো আমরা সবাই জানি। ফেইস, বডির স্কিনের জন্য এক্সফোলিয়েশন যেমন দরকার, তেমনি আমাদের স্ক্যাল্পের জন্যও এটি প্রযোজ্য। এই ডেড সেলসের পাশাপাশি অয়েল, ডার্ট, মিনারেলস এগুলো জমে স্ক্যাল্পে লেয়ার ক্রিয়েট হয়। সেক্ষেত্রে এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে স্ক্যাল্প ডিপলি ক্লিন হয়। হার্ড ওয়াটারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে স্ক্যাল্পকে সুরক্ষিত রাখতে এটি একটি বেস্ট অপশন।
৫. ফিটকিরির ব্যবহার
শাওয়ারের ১০-১৫ মিনিট আগে বালতিতে পরিমাণমতো পানি নিয়ে তাতে সামান্য ফিটকিরি দিলে পানিতে থাকা খনিজ ও ইমপিওরিটি বালতির নিচে থিতিয়ে যাবে। থিতিয়ে যাওয়ার পর উপরের পানি আস্তে আস্তে অন্য বালতিতে ট্রান্সফার করুন নিচের অংশ বাদ দিয়ে। তাহলে পানিতে থাকা মিনারেলের পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে যাবে।
৬. অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কিছুটা অ্যাসিডিক। এই অ্যাসিডিক নেচারের কারণে হার্ড ওয়াটার থেকে হওয়া মিনারেল বিল্ডআপকে এটি দ্রবীভূত করতে পারে এবং এতে মিনারেল রিমুভাল প্রসেস সহজ হয়ে যায়। এটি স্ক্যাল্প ও চুলের পিএইচ লেভেল ব্যালেন্স করে। চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে ৩ কাপ পানিতে ১ টেবিল চামচ ভিনেগার মিক্স করে ব্যবহার করতে হবে।
৭. আরগান অয়েল অ্যাপ্লাই করা
শাওয়ারের সময় হার্ড ওয়াটার আপনার চুল রুক্ষ করে দিতে পারে, কিন্তু যদি ভেজা চুলে দু’ তিন ফোঁটা আরগান অয়েল ম্যাসাজ করে নিতে পারেন, তাহলে চুল থাকবে ময়েশ্চারাইজড, সফট ও ম্যানেজেবল। চাইলে আপনার রেগুলার শ্যাম্পুর সাথে কয়েক ড্রপ আরগান অয়েল মিক্স করে শ্যাম্পু করতে পারেন। এতে আছে হাইড্রেটিং ও ময়েশ্চারাইজিং প্রোপারটিজ যা ড্যামেজড হেয়ার রিপেয়ার করতেও দারুণ ইফেক্টিভ।
উপরের টিপসগুলো মেনে চললেই হার্ড ওয়াটারের কারণে হওয়া ড্যামেজ থেকে চুল সুরক্ষিত রাখতে পারবেন খুব সহজে। সাপ্লাইয়ের পানি তো আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, কিন্তু কিছু সতর্কতা মেনে চললে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে পারবেন! আজ তাহলে এই পর্যন্তই, আবারও চলে আসবো নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লিখেছেন- জাফরিন জাহান, শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
ছবি- সাটারস্টক
The post শাওয়ারের সময় হার্ড ওয়াটার আপনার চুল রুক্ষ করে দিচ্ছে না তো? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/zdlY8Is
0 comments: