Tuesday, July 25, 2023

যে ভুলগুলোর কারণে নিজের অজান্তেই চুল হয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ!

ঝলমলে সুন্দর চুল কে না চায়! আর এই প্রত্যাশা থেকেই আমরা কত ধরনের প্রোডাক্ট দিয়ে চুলের যত্ন নেই। কিন্তু তবু দেখা যায় যে প্রোপারলি যত্ন নেওয়ার পরেও চুল কেমন যেন নিষ্প্রাণ, রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে! যা দেখে কেমন যেন হতাশা চলে আসে! সবারই কমন প্রশ্ন ‘আর কী কী করলে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে?’ এক্ষেত্রে অপুষ্টি একটি বড় কারণ। এছাড়া আমাদের ডেইলি লাইফের কিছু ভুলই কিন্তু চুলকে এমন রুক্ষ-শুষ্ক করার জন্য দায়ী। যে ভুলগুলোর কারণে নিজের অজান্তেই চুল হয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ, সেগুলো নিয়ে আজ আমরা জানবো।

যে ভুলগুলোর কারণে চুল রাফ ও ড্রাই হয়ে যায়

১. চুলের ধরন না বুঝেই প্রোডাক্ট ব্যবহার

আমাদের প্রত্যেকের চুল ও মাথার ত্বকের ধরন আলাদা। তাই আপনি চুলের যত্নে যে প্রোডাক্টই ব্যবহার করেন না কেন তা যেন আপনার হেয়ার কনসার্নকে টার্গেট করে এবং অবশ্যই যেন চুল ও স্ক্যাল্পের সাথে মানানসই হয়। প্রোডাক্ট বাছাইয়ে সতর্ক হতে হবে, এই বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করা উচিত না। যেমন আপনার যদি ড্রাই স্ক্যাল্প হয় আর আপনি স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বেইজড কোনো শ্যাম্পু ব্যবহার করেন রেগুলার বেসিসে, তাহলে নিশ্চয়ই সেটি আপনার হেয়ার ও স্ক্যাল্পের জন্য বেনিফিসিয়াল হবে না। এতে আপনার হেয়ার আরও ড্রাই হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন নারিশিং ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত মাইল্ড শ্যাম্পু।

২. চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে কিছু অভ্যাস

চুলের যত্নে প্রথমেই যে ব্যাপারটা আসে তা হলো শ্যাম্পু করা। চুল ও স্ক্যাল্পের ধরন অনুযায়ী সপ্তাহে যে কয়দিন শ্যাম্পু করা প্রয়োজন সেই কয়দিন শ্যাম্পু করতে হবে, এর বেশি বা কম নয়। সাধারণত যাদের তৈলাক্ত, বিল্ডআপ যুক্ত স্ক্যাল্প অথবা খুব দ্রুত ময়লা হয়ে যায়, এমন ক্ষেত্রে ডেইলি শ্যাম্পু করার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে চুলের ধরন অনুযায়ী একটি ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু বাছাই করতে হবে যাতে সালফেটযুক্ত সারফেকট্যান্ট থাকবে। এই ধরনের শ্যাম্পুগুলো সপ্তাহে এক থেকে দুইদিন ব্যবহার করাই যথেষ্ট, কারণ অতিরিক্ত ব্যবহারে স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল অয়েলও ওয়াশ আউট হয়ে যেতে পারে। সপ্তাহে অন্যান্য দিন মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

যে ভুলগুলোর কারণে চুল রাফ ও ড্রাই হয়ে যায়

শ্যাম্পু করার সময় অনেকেই মাথার ত্বক ও চুল পানি দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেয় না। এই অভ্যাসটি কিন্তু ক্ষতিকর৷ অনেকেই সরাসরি শ্যাম্পু ড্রাই হেয়ার শ্যাফটে অ্যাপ্লাই করে ম্যাসাজ করে এবং তারপর পানি দিয়ে ফেনা তৈরি করে। এই অভ্যাসটি চুলের প্রোটিন লেয়ারের ক্ষতি করে। জোরে জোরে রাব করার ফলে হেয়ার ড্যামেজ ও রাফ হয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনমতো শ্যাম্পু নিয়ে তাতে সামান্য পানি মিক্স করে ভেজা স্ক্যাল্পে আলতো হাতে ম্যাসাজ করে নিন। ড্রাই হেয়ারের ক্ষেত্রে আরেকটি ভুল অভ্যাস হলো চুলের নিচের অংশে শ্যাম্পুর ব্যবহার। নিচের দিকে আলাদা করে শ্যাম্পু দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, স্ক্যাল্পে ফোম ক্রিয়েট করে হেয়ার লেন্থে আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করে নিলেই এনাফ। অনেকেই গরমের সময় দীর্ঘক্ষণ গোসল করতে পছন্দ করেন, এটিও চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে, সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না।

৩. কন্ডিশনার ব্যবহার না করা

শ্যাম্পু করার পর চুলের কিউটিকলগুলো ওপেন হয়ে যায়, কন্ডিশনার এই ওপেন হেয়ার কিউটিকল ক্লোজ করে। হেয়ার কিউটিকল আমাদের চুলকে এক্সটার্নাল ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা দেয়। শ্যাম্পুর পর যখন এগুলো ওপেন থাকে, চুলের ময়েশ্চার খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায়। আর এটা থেকেই হেয়ার ব্রেকেজ, ফ্রিজিনেস এই প্রবলেমগুলো শুরু হয়। শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।

৪. হার্শ টাওয়েল ব্যবহার করা

কিছু কিছু তোয়ালের কাপড় বেশ রুক্ষ ও খসখসে হয়ে থাকে। এগুলো চুল মোছার জন্য একদমই ব্যবহার করা উচিত না। এতে চুলের বাইরের আবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চুল রুক্ষ হয়ে যায়। তাই সবসময় নরম সুতি কাপড় বা নরম টিশার্ট, নরম তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত।

চুল মোছা

৫. রোদে চুল শুকানো

আমাদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা যে রোদে চুল শুকানো ভালো, যেহেতু তাপে চুল খুব দ্রুত শুকায়। এটি একটি ভুল ধারণা। দুপুরের কড়া রোদে চুল শুকানোর তো উপকারিতা নেই, বরং ইউভি রে চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। রোদের তাপ ও সূর্যের আলোতে থাকা ইউভি রে হেয়ার ড্যামেজ করে দেয় আপনার অজান্তেই। কড়া রোদের মধ্যে ক্যাপ, ছাতা, স্কার্ফ ব্যবহার করা উচিত যেন চুল সুরক্ষিত থাকে।

৬. ভেজা চুলে ঘুমানোর অভ্যাস

অনেকেরই অভ্যাস আছে রাতে গোসল করা অথবা ঘুমাতে যাওয়ার আগে গোসল করা। এছাড়াও অনেকেই হয়তো ব্যস্ততার কারণে দিন শেষে গোসল করেন। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, ভেজা চুল নিয়ে কখনোই ঘুমাতে যাওয়া যাবে না। চুল ভেজা থাকা অবস্থায় বেশ ভঙ্গুর থাকে এবং হালকা টান লাগলেও ছিঁড়ে যেতে পারে। রাতে শাওয়ার নিলেও চুল ভালোভাবে শুকিয়ে লুজ ব্রেইড অথবা খোপা করে ঘুমানো উচিত। সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করলে সেটা চুলের জন্য বেশ ভালো হবে।

৭. সঠিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার না করা

অতিরিক্ত গরম অথবা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি চুলের জন্য ক্ষতিকর। এই কারণেও নিজের অজান্তে চুল হয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ! তাই চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে নরমাল রুম টেম্পারেচারের পানি ব্যবহার করা উচিত সবসময়। কুসুম গরম পানিও ব্যবহার করা যায়। ডিরেক্ট গরম পানি দিয়ে চুল ওয়াশ করলে ন্যাচারাল অয়েল স্ট্রিপ হয়ে যায়, চুল অনেক বেশি রুক্ষ দেখায়।

সঠিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার

৮. অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো

অনেকেরই ধারণা বেশি বেশি আঁচড়ালে চুল হেলদি থাকে! এটি একটি ভুল ধারণা বা মিথ। অতিরিক্ত পরিমাণে চুল আঁচড়ালে চুলের উপরে থাকা প্রোটিন লেয়ার বা চুলের কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই প্রয়োজন ছাড়া ঘন ঘন চুল আঁচড়ানোর অভ্যাস বাদ দিতে হবে। চুল আঁচড়ানোর ক্ষেত্রে কাঠের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন।

৯. হিট প্রোটেকটর স্কিপ করা

আচ্ছা বলুন তো, হিট প্রোটেকটর সিরাম বা স্প্রে কে কে ব্যবহার করেন? জানি, অনেকেই এই বিষয়টি ইগনোর করেন। অনেকে ভেজা চুলে হিট স্টাইলিং টুলস ইউজ করেন, যা চুলকে পার্মানেন্টলি ড্রাই ও ড্যামেজ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বার বার হেয়ার স্ট্রেইট করা, কার্ল করা এগুলো চুলের জন্য ক্ষতিকর। চুলে হিট দেওয়ার আগে অবশ্যই হিট প্রোটেকটর ব্যবহার করা উচিত, যেন সরাসরি তাপ চুলে না লাগে। এতে হেয়ার ড্যামেজের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

হেয়ার ড্যামেজ

নজর দিন ফুড চার্টে

ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত প্রসেসড খাবারে থাকে উচ্চমাত্রায় তেল, মসলা, লবণ, চিনি যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সুন্দর ত্বক ও চুল পেতে হলে এসব খাবার পরিহার করতে হবে এবং শাকসবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাদ্য ডেইলি ফুড মেন্যুতে রাখতে হবে৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রথমেই বলেছি, পুষ্টির ঘাটতি থেকেও কিন্তু চুল রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই ডায়েট চার্টে ব্যালেন্স রাখা খুবই জরুরি। আরেকটি বিষয়, আমাদের কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমও দরকার। এই বিষয়টিও ইগনোর করা যাবে না।

এই নিয়মগুলো মেনে চলার পরেও যদি চুল ড্যামেজ হতে থাকে বা চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, তবে দেখতে হবে শরীরে কোনো ভিটামিনের অভাব আছে কিনা অথবা স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা। দরকার মনে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আজ তাহলে এই পর্যন্তই। ডেইলি লাইফের যে ভুলগুলোর কারণে চুলের ক্ষতি হচ্ছে, সেটি এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। আশা করছি, আপনারা এই বিষয়ে এখন থেকে সতর্ক থাকবেন। অনলাইনে অথেনটিক প্রোডাক্টস কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ- যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার, ওয়ারীর র‍্যাংকিন স্ট্রিট, ইস্টার্ন মল্লিকা, বসুন্ধরা সিটি, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), সীমান্ত সম্ভার, চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি।

ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক

The post যে ভুলগুলোর কারণে নিজের অজান্তেই চুল হয়ে যাচ্ছে নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ! appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/H2hJW7u
Previous Post
Next Post

0 comments: