Wednesday, July 12, 2023

মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল | অল্পেই স্বস্তিতে থাকার সহজ উপায়

‘পরিবেশ বাঁচাও! জীবন বাঁচাও!’ এই স্লোগান এখন বিশ্বজুড়ে। নানা কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যার কারণে বর্তমান জীবন তো বিপর্যস্ত বটেই, ভবিষ্যতও এখন হুমকির মুখে। তাই জীবনে স্বস্তি আনতে দায়িত্ব নিতে হবে এখন থেকেই। আর এই স্বস্তি পেতে সচেতন হতে হবে প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহার করা জিনিসপত্র নিয়ে। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যত কম জিনিস ব্যবহার করব, তত পরিবেশের প্রতি যে হুমকি তৈরি হয়েছে তা অনেকটাই কমিয়ে ফেলা সম্ভব। অনেকেই এখন এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন। যার কারণে আগ্রহ বেড়েছে মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল এর। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে অল্প জিনিস ব্যবহারে বেঁচে থাকার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানাবো কীভাবে আপনিও চাইলে মিনিমালিস্ট হতে পারেন।

মিনিমালিজম বা মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল কী?

গত কয়েক বছর ধরে মিনিমালিজম বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আপনি যখন একজন মিনিমালিস্ট হিসেবে জীবন যাপন করবেন, তখন শুধু সেই জিনিসগুলোই ব্যবহার করবেন যেগুলো আপনার দরকার। মিনিমালিজম প্র্যাকটিস করা একটি অনগোয়িং প্রসেস। এর মাধ্যমে জীবনে ফোকাসড থাকা যায়। বাজেটের মধ্যে থেকে কেনাকাটা করে ঘরকে খুব সুন্দরভাবে গুছিয়েও রাখা যায় মিনিমালিস্ট হলে।

আমাদের সবার বাসাতেই অনেক জিনিসপত্র আছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই হয়তো অপ্রয়োজনীয়। বেশিরভাগ সময়ই আপনি কোনো জিনিস ফেলতে পারেন না, যার কারণে স্ট্রেস বাড়তে থাকে। অল্পতেই স্বস্তিতে থাকার জন্য কীভাবে মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল শুরু করবেন? সেই উপায়ই জানাবো আজ।

মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল

মিনিমালিস্ট হওয়ার জন্য যা যা করতে হবে

জীবন সহজ করে তোলার জন্য মিনিমালিজমের কথা তো বলছি, কিন্তু শুরুটা করবো কীভাবে? চলুন জেনে নেয়া যাক তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর।

১) দাম নয়, কোয়ালিটি দেখে জিনিস কিনুন

মিনিমালিজম মানে আপনি যে কখনো শপিং করতে পারবেন না, তা নয়। এর অর্থ হচ্ছে ঠিক ততটুকুই কেনা যতটুকু আপনার দরকার। যখন আপনার কোনো পোশাক বা জুতার দরকার হবে, তখন দেখে নিন সেটি কতদিন টিকতে পারে। প্রাইস ট্যাগ দেখে হয়তো আপনি আজ জিনিস কিনছেন, কিন্তু সেটা কতদিন টিকবে সেটা আপনি জানেন না। আর হিসাব না করে এভাবে জিনিস কিনলে সেটা এক সময় শুধু আবর্জনাতেই পরিণত হয়। তাই খরচ কমান, মানসম্পন্ন জিনিস কিনুন।

২) কেনার আগে চিন্তা করুন

দোকানে যেয়ে হুটহাট পছন্দ করে কিছু না কিছু কিনে ফেলার অভ্যাস সম্ভবত আমাদের সবার মধ্যেই আছে। কিন্তু এই অভ্যাস যদি কন্ট্রোল না করা যায়, তাহলে কখনোই মিনিমালিস্ট হওয়া যাবে না। তাই কেনার আগে কয়েকবার ভাবুন। যে জিনিসটি কিনছেন, সেটি কি আসলেই আপনার জন্য জরুরি? আপনি কি সত্যিই সেটি ব্যবহার করবেন? যদি হঠাৎ আপনার চিন্তার বদল হয়, তাহলে কি সেটি শুধু শুধু জায়গাই নষ্ট করবে? আপনার কাছে যা আছে সেগুলো দিয়েই কি এখন চলে যাবে নাকি নতুন করে কিনতেই হবে? প্রতিটি জিনিস কেনার আগে অবশ্যই এসব নিয়ে ভাবুন।

মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল লিড করতে চাইলে ভেবেচিন্তে কেনাকাটা করতে হবে

কেনাকাটার ব্যাপারে একটা ছোট্ট টিপস দেই আপনাদের। যে কোনো নতুন জিনিস যেমন- পোশাক, জুতা, বিউটি প্রোডাক্টস, হোম ডেকোর আইটেম ইত্যাদি কেনার আগে মাসখানেক ভাবুন। ঠিক এক মাস পর আবারও ভাবুন সেই জিনিসটি আপনার প্রয়োজন কিনা। আমার মনে হয়, আপনাদের মধ্যে বেশিরভাগই বলবেন সেটির আর আপনার প্রয়োজন নেই। শুধু শুধু অপচয়! ঠিক এভাবেই ধীরে ধীরে আপনি মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল এর শুরু করতে পারবেন।

৩) ডিক্লাটার করুন

মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল লিড করার প্রথম এবং জরুরি পদক্ষেপটি হচ্ছে ডিক্লাটার করা। কোন জিনিসটি আপনার না হলেও চলবে সেটা খুঁজে বের করতে হয়তো আপনার কয়েক দিন লাগতে পারে। তবে একবার কাজটি করে ফেলতে পারলে দেখবেন বেশ রিলিফ লাগছে।

ডিক্লাটার করার জন্য সহজ তিনটি ধাপ হচ্ছে-

  • যেগুলো রাখবেন সেগুলো রেখে দেয়া
  • ডোনেটের জিনিস ও কাপড় আলাদা করা
  • যেগুলো আর ব্যবহারযোগ্য নয় সেগুলো ফেলে দেয়া
কী কী ডিক্লাটার করা যায়?

কাপড় – আমাদের অনেকেরই এমন কিছু কাপড় আছে যেগুলো আর হয়তো কখনো পরা হবে না। আলমারিতে রেখে দেয়ায় সেগুলো শুধু জায়গাই ভরে ফেলছে। চেষ্টা করুন এই কাপড়গুলো আলাদা করে ফেলতে।

ডিক্লাটার

বই ও কাগজপত্র – আপনার ঘরে কি এমন বই রয়েছে যেগুলো আপনার পছন্দ নয় অথবা কখনো পড়া হবে না? তাহলে সেগুলো বিক্রি করে দিন। আবার কারও বাড়িতে রিসার্চ পেপার, অফিস আদালতের নানা কাগজপত্র জমা থাকে। অনেকদিন জমা থাকার কারণে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই কাগজপত্রের ডিজিটাল ভার্সন করে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে সেইভ করে রাখতে পারেন। তাহলে কাগজের ঝামেলায় আর যেতে হবে না। ঘরটাও অনেকখানি পরিষ্কার থাকবে।

রান্নাঘরের জিনিসপত্র – রান্নাঘরে প্রতিদিনই কাজ করা হয়, যার কারণে রান্নার কাজে ব্যবহার করা জিনিস দ্রুত পুরনো হয়। তাই অনেকদিন ব্যবহার করা হয়েছে এমন জিনিসগুলো যদি বদলাতে চান, তাহলে অবশ্যই পুরনোগুলো আগে সরিয়ে নিন।

বিউটি প্রোডাক্টস ও ওষুধ – পারসোনাল কেয়ারের জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিউটি প্রোডাক্টস কেনার আগ্রহ থাকে অনেকেরই। দেখা যায় একটি ব্যবহার করতে করতে অন্যটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন হলে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই কাউকে দিয়ে দিন। আবার অনেকেই ওষুধের বক্সে এক্সপায়ার্ড হয়ে যাওয়া ওষুধ রেখে দেন। এগুলোও ফেলে দিয়ে জায়গা খালি করতে পারেন।

৪) রি-ইউজ করুন

একবার যখন চিন্তা করেছেন ডিক্লাটার করবেন, তখন এটাও ভাবতে হবে যে কোন প্রোডাক্টগুলো রি-ইউজ করা যায়। একটা সিম্পল পানির বোতল বা গ্লাস কিন্তু খুব সহজেই নতুনভাবে ব্যবহার করা যায়। চাইলে বোতল কেটে গাছ লাগিয়ে ফেলতে পারেন।

রিসাইক্লিং

৫) কম বাসনে রান্না করুন

রান্না করার জন্য অনেক বাসন ব্যবহার করতে হবে এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। চেষ্টা করুন যত কম বাসনকোসন ব্যবহার করা যায়। এতে খুব বেশি রান্না হবে না, খাবারও নষ্ট হবে না। আর একদিনে অনেক খাবার রান্না করবেন না। মানুষের সংখ্যা যে কয়জন, ঠিক ততজনের জন্যই খাবার রাঁধুন।

মিনিমালিজমের স্টার্টিং কিছু টিপস তো আমি আপনাদের জানিয়ে দিলাম। অবশ্যই এর শেষ কিন্তু এখানেই নয়। আগেই বলেছি, এটি একটি অনগোয়িং প্রসেস। এই পুরো প্রসেসটি আপনাকে রিপিট করতে হবে। বেশি বেশি ডোনেট করুন, কম কিনুন, বেটার কোয়ালিটির প্রোডাক্ট চুজ করুন। এই অভ্যাস রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। এটা পুরোটাই প্র্যাকটিসের ব্যাপার। মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল এর মানেই হচ্ছে নিতান্ত জরুরি জিনিসগুলো আপনার কাছে রাখুন, বাকিগুলো এলিমিনেট করে ফেলুন। একবার যখন অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো লাইফ থেকে রিমুভ করে দিবেন, তখন আপনি নিজেই বুঝবেন সত্যি সত্যি কোন কোন জিনিস আসলে আপনার জীবনে গুরুত্ব রাখে। ওই যে কথায় বলে না, ‘Less is more’! এটা কিন্তু একদম সত্যি। তাহলে আজ থেকে আপনার জীবনেও নতুন পরিবর্তন শুরু হোক। শুভকামনা আপনার জন্য।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

The post মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইল | অল্পেই স্বস্তিতে থাকার সহজ উপায় appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/C9fdjFM
Previous Post
Next Post

0 comments: