‘এনলার্জড পোরস মিনিমাইজ করবো কেন? আমি চাই পোরস একদম ভ্যানিশ হয়ে যাক!’ অদ্ভুত শোনাচ্ছে? পোরস সম্পর্কে সঠিক নলেজ না থাকার কারণে এই কথাটা অনেকেই বলেন। তবে সত্যিটা হচ্ছে পোরস কখনোই ভ্যানিশ করা সম্ভব নয়। বরং এনলার্জড পোরস মিনিমাইজ করা যায়। কিন্তু কীভাবে? পোরস মিনিমাইজের জন্য ইফেক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টই বা কোনগুলো? একটু ধৈর্য নিয়ে লেখাটি পড়ুন। আশা করি পোরস মিনিমাইজিং সংক্রান্ত সকল কনফিউশন দূর হয়ে যাবে।
পোরস কী?
আমাদের স্কিনের সারফেস অর্থাৎ ত্বকের উপরিভাগে থাকা লোমকূপই হচ্ছে পোরস। এই পোরসের মাধ্যমেই বডির সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে তেল, ঘাম বের হয়ে যায়। পোরস আমাদের স্কিনের টেম্পারেচার রেগুলেট করে। পোরসের মাধ্যমে আমাদের শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম অব্যাহত থাকে। অর্থাৎ পোরস হুট করেই আমাদের শরীরে চলে আসে এমন নয়। বরং এর উপস্থিতি শরীরে সব সময়ই থাকে। যার কারণে পোরস বডি থেকে রিমুভ বা ভ্যানিশ করা সম্ভব নয়। এই পোরস আমরা খালি চোখে দেখি না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং কিছু ভুলের কারণে পোরস বড় হয়ে যেতে পারে। তখনই আমরা তা দেখতে পাই।
ক্লগড ও এনলার্জড পোরসের মধ্যে পার্থক্য
আমাদের স্কিনে থাকা সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে ন্যাচারালি সেবাম প্রোডিউস হয়। মূলত স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড ও প্রোটেক্টেড রাখাই সেবামের প্রধান কাজ। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু থেকে স্কিনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার তৈরি করে সেবাম। যতক্ষণ সেবাম ন্যাচারালি প্রোডিউস হয়, ততক্ষণই এটা স্কিনের জন্য বেনিফিসিয়াল। তবে এক্সেস সেবাম প্রোডিউস হলে এর সাথে ডেড সেলস, সোয়েট, পল্যুটেন্ট, মেকআপ রেসিডিউ ইত্যাদি অ্যাড হয়ে পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে। ক্লগড পোরস থেকে দেখা দিতে পারে একনে।
অন্যদিকে এনলার্জড পোরস এর অর্থ হচ্ছে পোরসের সাইজ বড় হয়ে যাওয়া। জেনেটিক্যাল, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, বয়স বৃদ্ধি এবং আমাদের রেগুলার করা কিছু স্কিন কেয়ার মিসটেকের কারণে পোরসের সাইজ বড় হয়ে যায়। যার কারণে স্কিনে সেগুলো ভিজিবল হয়।
কী কী ভুলের কারণে পোরস বড় হয়ে যায়?
১) ওভার ওয়াশিং
বার বার ক্লেনজার দিয়ে ফেইস ওয়াশ করলে সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে বেশি সেবাম প্রোডিউস হতে থাকে। ফলে পোরস ক্লগড ও এনলার্জ হওয়ার চান্স বেড়ে যায়।
২) স্কিন এক্সফোলিয়েট না করা
সময়মতো স্কিন এক্সফোলিয়েট না করলে স্কিনের ডেড সেলস, এক্সেস সেবাম, ঘাম ইত্যাদি একসাথে জমে পোরস ক্লগ করে ফেলে। তখন বন্ধ হয়ে যাওয়া পোরস থেকে এক্সেস অয়েল ও সোয়েট বের হওয়ার জন্য পোরস এ প্রেশার দেয়। যার কারণে পোরস স্ট্রেচ হয় এবং এনলার্জড পোরস ভিজিবল হয়।
৩) অতিরিক্ত ঠান্ডা পানির ব্যবহার করা
অনেকেই পোরসের সাইজ মিনিমাইজ করার জন্য বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে ফেইস ওয়াশ করেন। এতে ত্বকের তেমন কোনো বেনিফিট তো হয়ই না, বরং পোরসের সাইজ বড় হয়ে যায়।
৪) প্রোপার সান প্রোটেকশন না নেয়া
বাইরে যাওয়ার সময় প্রোপার সান প্রোটেকশন ইউজ না করার কারণে মেছতা বা মেলাজমা দেখা দেয়। সেই সাথে কমে যায় স্কিনের ইলাস্টিসিটি ও কোলাজেন প্রোডাকশন। যার ফলে স্কিনে এজিং সাইনস ভিজিবল হয়, আর এর প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় এনলার্জড পোরস।
এছাড়া আরও কিছু কারণ আছে। যেমন- স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই হলে, হার্শ স্ক্রাব বা ক্লেনজার ব্যবহার করলে, একনে ও ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডস খোঁটাখুঁটি করলেও এনলার্জড পোরস হওয়ার চান্স বেড়ে যায়।
এনলার্জড পোরস মিনিমাইজে ইফেক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট
পোরস একবারে ভ্যানিশ করা বা পার্মানেন্টলি চেঞ্জ করা সম্ভব নয়। তবে সঠিক ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করে পোর সাইজ মিনিমাইজ ও টাইট করা পসিবল। এজন্য সবচেয়ে বেনিফিসিয়াল ইনগ্রেডিয়েন্ট হচ্ছে নিয়াসিনামাইড ও স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। এই দুটো ইনগ্রেডিয়েন্ট যুক্ত প্রোডাক্ট এবং সূর্যরশ্মি থেকে স্কিনকে প্রোটেক্ট করার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এনলার্জড পোরস মিনিমাইজ করা পসিবল। নিয়াসিনামাইড অন্যান্য ইনগ্রেডিয়েন্ট যেমন- স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, রেটিনয়েড বা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের সাথে কম্বাইন্ড করে ইউজ করলে সবচেয়ে বেশি ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
ইফেক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট সম্পর্কে তো জানালাম। কিন্তু এগুলো আসলে কীভাবে পোরস মিনিমাইজ করতে হেল্প করে সেটা তো জানা জরুরি। তাই না? তবে চলুন এ সম্পর্কে এবার জেনে নেয়া যাক-
নিয়াসিনামাইড
ভিটামিন বি৩ এর একটি ফর্ম হচ্ছে নিয়াসিনামাইড। একে নিকোটিনামাইডও বলা হয়। নিয়াসিনামাইডকে বলা হয় সুপারস্টার ইনগ্রেডিয়েন্ট। এক্সেস সেবামের কারণে পোরস ক্লগড হয়ে যায় এবং এনলার্জ দেখায়। সেবামের এই ওভার প্রোডাকশনকে কন্ট্রোল করে নরমালাইজ করতে হেল্প করে নিয়াসিনামাইড। এই ইনগ্রেডিয়েন্টটি কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়াতে হেল্প করে, একনে স্পট ও পিগমেন্টেশন কমায়, সান ড্যামেজ কমায়, স্কিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতেও এটি হেল্পফুল।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড হলো এক ধরনের বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড। এর অয়েল সল্যুবল ন্যাচারের কারণে ডিপলি পোরসে পেনিট্রেট হতে পারে। এছাড়া পোরসের ভিতরে যেয়ে এক্সেস অয়েল ও সেবাম ডিজলভ করে পোরস ক্লিন করে একনে ফর্মেশন প্রিভেন্ট করে।
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড
স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখতে, স্কিনকে প্লাম্পি ও সফট করে তুলতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বেশ হেল্পফুল। এটি স্কিন থেকে পানি বা জলীয় উপাদান শুকিয়ে যাওয়া রোধ করে বলে স্কিন অনেক হেলদি ও ইয়াংগার দেখায়।
গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট
স্কিনের ইনফ্ল্যামেশন রিডিউস করতে গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট বেশ কার্যকর। এতে আছে Epigallocatechin Gallate নামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি স্কিন ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে, ইনফ্ল্যামেশন কমায়। সেই সাথে স্কিনের সেবাম প্রোডাকশন কমাতে, পোরস শ্রিঙ্ক করতে এবং ক্লগিং প্রিভেন্ট করতেও এটি হেল্পফুল।
পোরস মিনিমাইজ করার জন্য এতক্ষণ যে ইনগ্রেডিয়েন্টগুলো নিয়ে কথা বললাম সেগুলো উপস্থিত আছে এমনই একটি প্রোডাক্টের রিভিউ জানাবো আজ।
Skin Café My Therapist Serum- Pore Perfect
সাজগোজের ওয়েবসাইট ভিজিট করে Skin Café My Therapist Serum- Pore Perfect সিরামটি সম্পর্কে আমি জানতে পারি। বয়স ত্রিশ পার হয়ে যাওয়ার কারণে এনলার্জড পোরস বেশ কিছুদিন ধরেই ভিজিবল ছিল আমার স্কিনে। তাই এমন একটি সিরাম খুঁজছিলাম যেটিতে পোরস মিনিমাইজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট আছে। মাত্র তিন সপ্তাহ ব্যবহারেই বেশ চেঞ্জ ভিজিবল হয়েছে ফেইসে। সিরামটি ব্যবহারে তাই আমি স্যাটিসফাইড। বয়স বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে যাদের পোরস ভিজিবল হচ্ছে, তারা নিশ্চিন্তে সিরামটি ব্যবহার করতে পারেন।
এক নজরে সিরামটির ফিচার
- এতে আছে ৫% নিয়াসিনামাইড, যা ক্লগড পোরস আনক্লগ করতে এবং পোরস মিনিমাইজে হেল্প করে
- ০.৫% স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ডিপলি পোরসে পেনিট্রেট হয়ে এক্সেস অয়েল রিডিউস করে
- সিরামটিতে আছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড যা স্কিনের ড্রাইনেস কমায়
- স্কিনের ইনফ্ল্যামেশন রিডিউস করতে এতে আছে গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট
- ৩০ মি.লি. এর প্যাকেজিংয়ে পাওয়া যাচ্ছে
- রাতে অ্যাপ্লাই করতে হয় এবং দিনে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে
- বয়স ২০+ হলে স্কিন কেয়ার রুটিনে অ্যাড করতে পারেন
- অল টাইপ স্কিনে স্যুইটেবল
- ডার্মাটোলজিক্যালি টেস্টেড
ব্যবহারের নিয়ম
রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ফেইস ভালোভাবে ক্লিন করে নিতে হবে। এরপর টোনার, সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করতে হবে। সিরাম ৩/৪ ড্রপ অ্যাপ্লাই করাই যথেষ্ট। সকালে স্কিন কেয়ার রুটিন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সেই সাথে রুটিনে অ্যাড করতে হবে SPF 40-60 যুক্ত কোনো সানস্ক্রিন।
প্রেগনেন্ট উইম্যান এবং সদ্য মা হয়েছেন এমন মায়েরা যদি সিরামটি ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
একইসাথে অন্য কোনো সিরাম কি ব্যবহার করা যাবে?
আপনি চাইলে এই সিরামের পাশাপাশি অন্য সিরামও ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই দুটো প্রোডাক্ট ব্যবহারের মধ্যে কিছু সময় দিতে হবে। অথবা চাইলে এটি রাতে এবং অন্যটি সকালে ব্যবহার করতে পারেন।
আশা করি এখন বুঝতে পেরেছেন, কেন পোরস বড় হয় এবং কীভাবে এনলার্জড পোরস মিনিমাইজ করা যায়। সেই সাথে জানিয়ে দিলাম পোরস মিনিমাইজ করার ইফেক্টিভ একটি প্রোডাক্ট সম্পর্কেও। আমি এই প্রোডাক্টটি পারচেজ করেছি সাজগোজ থেকে। আপনি অনলাইনে শপ.সাজগোজ.কম থেকে অথবা সাজগোজের কয়েকটি আউটলেট যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার এবং চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার থেকেও কিনতে পারেন।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক
The post এনলার্জড পোরস মিনিমাইজে কোন কোন ইনগ্রেডিয়েন্ট সবচেয়ে ইফেক্টিভ? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/YMonSIf
0 comments: