Sunday, June 18, 2023

ঘর মশ তড়ত কয়ল অযরসল বযবহর সবসথযঝক বড় যচছ?

মশার কামড় থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে- ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি। বেশ কয়েক বছর ধরে এদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। মশাবাহিত রোগে প্রতিবছর বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। রাজধানীতে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের মাঝামাঝি মশা অনেকগুণ বেড়ে যায় বলে মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে সিটি কর্পোরেশন স্প্রে করে থাকে। এর পাশাপাশি বাসাবাড়িতেও মশার কয়েল, অ্যারোসল, লিকুইড ভ্যাপর ব্যবহার করা হয়। ঘরে মশা তাড়াতে কয়েল, অ্যারোসল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে? এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? চলুন জেনে নেই।

মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব

কয়েল, অ্যারোসল মশা দূর করতে সক্ষম হলেও যেহেতু রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়, তাই আমাদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন এখন জেনে নেই কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে সেই বিষয়ে।

১) মশার কয়েলের প্রধান উপাদান হচ্ছে পাইরোফ্রয়েড। তবে এর আসল সক্রিয় উপাদান হচ্ছে কীটনাশক ডিডিটি বা ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন। কয়েলের ধোঁয়ায় ফরমালডিহাইড, হাইড্রোকার্বনসহ আরও কিছু উপাদান থাকে, যেগুলো আমাদের ফুসফুসের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা, হাঁপানি রোগীদের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

ঘরে মশা তাড়াতে কয়েল

২) বেশির ভাগ অ্যারোসল স্প্রেতে পাইরিথোয়েড নামের রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা খুব বেশি ক্ষতিকর না হলেও হাঁপানি, ব্রংকাইটিস রোগীদের শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। কখনো কখনো চোখ জ্বালা করতে পারে, মাথা ব্যথারও কারণ হতে পারে। আবার কারও অ্যালার্জির সমস্যা হয়।

৩) এছাড়া ভেজাল মশার কয়েল বা অনুমোদিত মাত্রার বেশি পরিমাণে কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহারে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা যেমন- অ্যাজমা, নিউমোনিয়া এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। চর্মরোগ হতে পারে, দীর্ঘসময় ব্যবহারের কারণে রক্তকণিকার উৎপাদন কমে যেতে পারে।

কোনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর?

সাধারণত কীটনাশকে দুই মাত্রার রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। একটি হচ্ছে অ্যাগ্রিকালচারাল গ্রেড, মানে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত মাত্রা। আরেকটি হচ্ছে পাবলিক হেলথ গ্রেড, অর্থাৎ এটি মানব শরীরের সংস্পর্শে আসার জন্য নির্ধারিত মাত্রা। মশার কয়েল বা স্প্রে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাসায়নিকের মাত্রা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে।

মশার কামড়

যদি দেখেন যে ঘরে মশা তাড়াতে কয়েল ব্যবহার করার পর টিকটিকি, অন্য ছোট পোকা মরে যাচ্ছে; মশাও সাথে সাথে মরে যাচ্ছে, তাহলে বুঝে নিতে হবে সেটিতে অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। কয়েলের কাজ মশা তাড়ানো, মশা কার্যকরভাবে মেরে ফেললে বুঝতে হবে সেখানে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।

তাহলে কী করবেন?

ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে কোনো না কোনো পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া উপায় নেই। ঘরে অ্যারোসল, কয়েল ব্যবহারের সময় যেসব সতর্কতা মানতে হবে, সেগুলো জেনে নেই এখন।

১) লেবেলবিহীন কিংবা নাম না জানা ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে, শুধু এমন পণ্যই ঘরে মশা তাড়াতে ব্যবহার করতে হবে। আর প্যাকেজিংয়ে উল্লেখ করা ব্যবহারবিধি আগে ভালোভাবে পড়ে নিন।

২) ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ করে অ্যারোসল স্প্রে করুন এবং এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হবে দ্রুত। স্প্রে করার সময় শিশুদের ও যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের দূরে থাকতে হবে।

অ্যারোসল স্প্রে

৩) স্প্রে ড্রপলেটস ফ্লোরে নেমে আসতে ২০ মিনিট সময় লাগে সাধারণত, তাই তখন সেখানে কেউ উপস্থিত থাকলে তিনি সরাসরি ঐ কীটনাশকের সংস্পর্শে আসবেন। অন্তত ২০ মিনিট পর রুমে প্রবেশ করুন।

৪) এখন ক্রিম, লোশন, ফেব্রিক রোল অন বিভিন্ন ফর্মে Mosquito Repellent পাওয়া যায়। সেগুলোও সাময়িক সময়ের জন্য মশা থেকে সুরক্ষিত রাখে। অনেকে Mosquito Bat ব্যবহার করেন, সেটিও সেইফ অপশন। পরিবেশ ও শরীরের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, শুধুমাত্র পাওয়ার অন অবস্থায় শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

ঘরে মশা তাড়াতে কয়েল এর বদলে কী ব্যবহার করা যায়?

প্রাকৃতিকভাবে মশা দূর করার কিছু উপায় জেনে নেই চলুন-

১) কর্পূরের গন্ধে মশা দূর হয়। তাই ৫০ গ্রাম কর্পূরের ট্যাবলেট পানিতে মিশিয়ে ঘরে রেখে দিন, মশা কমে যাবে। দু’দিন পর সেই পানি বদলে নিতে হবে। তবে ছোট শিশু ঘরে থাকলে তার নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

২) লেবু ও লবঙ্গ ব্যবহারের এই টেকনিকটি অনেকেই জানেন! লেবু মাঝ বরাবর কেটে ভেতরের অংশে বেশ কয়েকটি লবঙ্গ গেঁথে দিন। এরপর লেবু জানালার গ্রিলে ও ঘরের কোণায় রাখুন। ঘরে মশা তাড়াতে ন্যাচারাল হোমমেড সল্যুশন হিসেবে এটি বেশ ইফেক্টিভ।

লেবু ও লবঙ্গ

৩) নিমপাতার অনেক গুণের মধ্যে একটি হলো মশামাছি তাড়ানো। মাটির পাত্রে জ্বলন্ত কয়লা নিয়ে তাতে নিমপাতা দিলে যে ধোঁয়া হবে, তাতে দ্রুত মশা দূর হয়। তবে এই টেকনিক ঘরের থেকে আউটডোরে বেশি কার্যকর।

৪) ঘরের ভেতরে টব থাকলে সেখানে থাই লেমন গ্রাস রাখতে পারেন। থাই লেমন গ্রাসে যে সাইট্রোনেলা অয়েল আছে, এর স্ট্রং স্মেলের কারণে মশা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কিচেনে, ডাইনিং টেবিলের সাইডে থাই লেমন গ্রাস রাখলে মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৫) জানেন কি, পুদিনা পাতার গন্ধে মশা ঘর থেকে বের হয়ে যায়? বেড সাইড টেবিলে পুদিনা পাতা রেখে দেখুন, মশার উৎপাত অনেকটাই কম মনে হবে।

ঘরে মশা তাড়াতে পুদিনা পাতা

মশার বংশবিস্তার রোধ করা

আমাদের নিশ্চিত করতে হবে ঘরের ভেতরে বা বাইরে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। কারণ বদ্ধ পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। তাই ঘরের আশেপাশের ঝোপঝাড় নিয়মিত ক্লিন করতে হবে, কোথাও যেন বৃষ্টির পানি না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।

শেষে বলতে চাই, অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাবেন। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো দারুণ কাজে আসবে আশা করি। আজ এই পর্যন্তই। নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও সচেতন করুন।

 

ছবি- সাটারস্টক

The post ঘরে মশা তাড়াতে কয়েল, অ্যারোসল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/1Fhkbje
Previous Post
Next Post

0 comments: