কথায় আছে কুড়িতে বুড়ি! তবে এটাও কিন্তু সত্যি, ছেলে কিংবা মেয়ে কেউই কুড়িতে বুড়ি হতে চায় না। বয়সকে আটকে রাখার জন্য সবার কত না চেষ্টা। বিভিন্ন কারণে অল্প বয়সে অনেকের স্কিনে বয়সের ছাপ পড়ে। সেই ছাপ রোধ করতে না বুঝে স্কিনে ব্যবহার করা হয় নানা ধরণের প্রোডাক্ট। এতে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। বয়সের ছাপ তো দূর হয়ই না বরং স্কিন আরও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ত্বকে বয়সের ছাপ কেন পড়ে, অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্টস কোনগুলো এবং অসময়ে এজিং রোধের ঘরোয়া প্যাকগুলো নিয়ে।
অসময়ে এজিং এর কারণঃ
সময়ের আগেই এজিং এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হ চ্ছেঃ
- বয়স
- সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি
- অতিরিক্ত ডায়েট
- অ্যালকোহল
- ধূমপান
- স্ট্রেস ইত্যাদি
অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্টসঃ
১) ভিটামিন সি
ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো ভিটামিন সি। কমলা, মাল্টা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। এই ফলগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন। এজিং রোধে ভিটামিন সি সিরামও ব্যবহার করতে পারেন। ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করবে।
২) নিয়াসিনামাইড
ত্বকের নমনীয়তা এবং ময়েশ্চার ধরে রাখতে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্টটি বেশ কার্যকর। নিয়াসিনামাইড ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ, রেডনেস দূর করে ত্বককে ব্রাইট করে। বাজারে নিয়াসিনালাইড সিরাম হিসাবে পাওয়া যায়। এছাড়া বেশ কিছু ফাউন্ডেশনেও নিয়াসিনামাইড উপাদান রয়েছে।
৩) রেটিনল
ত্বকের রিংকেল, ফাইন লাইন্স দূর করতে রেটিনল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ত্বকের বিভিন্ন কালো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন রেটিনল সিরাম। যে কোনো সিরামই কিন্তু রাতে ব্যবহার করতে হয়। আর দিনের বেলা অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
৪) কোলাজেন
স্কিন কেয়ারের অধিকাংশ প্রোডাক্টে কোলাজেন উপাদানটি বিদ্যমান। কোলাজেন স্কিনের ফাইন লাইন্স, রিংকেল দূর করে। কোলাজেন আসলে প্রাকৃতিক প্রোটিন, যা মানুষের শরীরেই তৈরি হয়। আর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। এটি স্কিনকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে। বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। তাই স্কিন কেয়ার রুটিনে কোলাজেন সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট রাখুন।
৫) হায়ালুরোনিক অ্যাসিড
স্কিনে রিংকেল রোধ করতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড অন্যতম। ত্বকের রিংকেল দূর করতে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড যুক্ত সিরাম অথবা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এটি ত্বক নরম ও কোমল করবে এবং রিংকেল ফ্রি স্কিন দিবে।
৬) গ্রিন টি
গ্রিন টি-এর অনেক সুবিধা রয়েছে। এর ফেসপ্যাক ত্বকের বলিরেখা দূর করে। এর পাশাপাশি ত্বকের ইনফ্ল্যামেশন এবং ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে। যা ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ারে ঘরোয়া কয়েকটি ফেইস প্যাকঃ
ঘরোয়া কয়েকটি ফেইস প্যাকের মাধ্যমে স্কিনের রিংকেল, ফাইন লাইন্স রিমুভ করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই, অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ারে রাখা যায় এমন কয়েকটি ফেইসপ্যাক নিয়ে।
১) শশা ও অ্যালোভেরা
ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে শশা ও অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। ত্বকের রুক্ষতা দূর করে স্কিনে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে এ দুই উপাদান।
শশা ও অ্যালোভেরা দিয়ে ফেইসপ্যাক তৈরি করার জন্য যা যা লাগবেঃ
- শশা
- ২ টেবিল চামচ টকদই
- অ্যালোভেরা জেল
- লেবুর রস
যেভাবে তৈরি করবেনঃ
- টকদই, অ্যালোভেরা জেল এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে নিন
- শশা কুচি করে মিশ্রণের মধ্যে দিয়ে দিন
- প্যাকটি ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে নিন
- শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন
২) ডিম ও মধু
চুলের জন্য ডিম পুষ্টি জোগায়, এটা কমবেশি সবার জানা থাকলেও ডিমও যে স্কিনের জন্য ভালো কাজ করে এটা অনেকেই জানেন না। এজিং রোধ করার জন্য ডিম ও মধু দুটো উপাদানই কিন্তু বেশ কার্যকর। ডিম স্কিন টাইট করে, স্কিন ঝুলে পড়া রোধ করবে। আর মধু স্কিন ময়েশ্চারাইজ করবে।
এ দুই উপাদান দিয়ে প্যাক বানাতে যা যা লাগবেঃ
- ডিমের কুসুম
- ২ টেবিল চামচ মধু
যেভাবে তৈরি করবেনঃ
- ২ টেবিল চামচ মধু এবং ২-৩ ফোঁটা পানি একসাথে মিশিয়ে নিন
- ডিমের কুসুম বিট করে মধু পানির মিশ্রণে দিয়ে দিন
- এই প্যাকটি স্কিনে ব্যবহার করুন
- শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
৩) হলুদ ও টকদই
হলুদে আছে অ্যান্টি-সেপটিক, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ত্বকের বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করে। টক দইতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন। এ দুই উপাদানই ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সক্ষম।
এ দুই উপাদান দিয়ে ফেইস প্যাক বানাতে যা যা লাগবেঃ
- ১/২ কাপ টকদই
- ২ টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া
যেভাবে তৈরি করবেনঃ
- টকদই এর সাথে হলুদের গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে নিন
- এটি স্কিনে ব্যবহার করুন
- ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন
৪) বেসন ও মসুর ডাল
ত্বকের ডার্ট, সানট্যান দূর করতে সাহায্য করে বেসন। আর মসুর ডাল ত্বকে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে ত্বকের বয়স কমিয়ে আনে। এছাড়া স্কিনের কালো দাগও দূর করে মসুর ডাল। এ দুই উপাদানের প্যাকে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল।
বেসন ও মসুর ডাল দিয়ে প্যাক বানাতে যা যা লাগবেঃ
- ১/২ কাপ বেসন
- ১/২ কাপ মসুরের ডাল
- পরিমাণমতো পানি
যেভাবে তৈরি করবেনঃ
- মসুরের ডাল ভালো করে পেস্ট করুন। অথবা ব্লেন্ডারে গুঁড়া করে নিন।
- মসুরের ডালের গুঁড়ার সাথে বেসন দিয়ে দিন।
- পরিমাণমত পানি দিন। মসুরের ডাল এবং বেসনের পেস্ট স্কিনে ব্যবহার করুন।
- শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
অসময়ে স্কিনে বলিরেখা কেউ চায় না। নিয়মিত স্কিনের ঘরোয়া যত্ন এবং প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট ব্যবহার করে রিংকেল, ফাইন লাইন্স এর মতো সমস্যাগুলোর হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
অনলাইনে অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। এছাড়া দুটো ফিজিক্যাল স্টোর সীমান্ত সম্ভার আর যমুনা ফিউচার পার্ক- সেখানে গিয়ে দেখে শুনেও কিনে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট।
ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক
The post অ্যান্টি এজিং ইনগ্রেডিয়েন্টস | তারুণ্যদীপ্ত ত্বক পেতে হোম রেমেডি appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/EnK9i5D
0 comments: