ব্রণ, পিম্পল বা একনের কথা আসলে প্রথমেই আসে স্যালিসাইলিক এসিডের কথা। আমাদের ব্যবহার করা অনেক ক্লেনজার, ময়েশ্চারাইজার, সিরামে স্যালিসাইলিক এসিড থাকে। কিন্তু আমরা কি জানি কীভাবে, কত পরিমাণ আমাদের ব্যবহার করা উচিত? ব্রণের বিরুদ্ধে যেসব ইনগ্রেডিয়েন্ট ভালো কাজ করে তার ভেতর টপ লিস্টে আছে স্যালিসাইলিক এসিড। ব্রণের উপর স্যালিসাইলিক এসিড ব্যবহার করলে এক রাতেই ব্রণ শুকিয়ে যায় আর কম নজরে আসে।
কিন্তু স্যালিসাইলিক এসিড আসলে কী করে? আমরা কীভাবে স্যালিসাইলিক এসিড থেকে বেনিফিটস পাবো? কারা এটা ইউজ করতে পারবে আর কারা পারবে না? ব্রণ কমানোর ক্ষেত্রে কেন স্যালিসাইলিক এসিড এত জনপ্রিয়? আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো স্যালিসাইলিক এসিডের এ টু জেড। স্কিন কেয়ারে স্যালিসাইলিক এসিডের ব্যবহার ও উপকারিতা জানতে চোখ রাখুন আজকের আর্টিকেলে।
স্যালিসাইলিক এসিড কী?
স্যালিসাইলিক এসিড কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে এটা আসলে কী। ব্যাপারটা যদিও একটু জটিল। কিন্তু যখন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসের ইনগ্রেডিয়েন্ট এর কথা আসে তখন সেটা নিয়ে আমাদের একটু জেনে রাখা ভালো।
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসে আমরা দুই ধরনের এসিড প্রায়ই দেখতে পাই।
• বিটা হাইড্রক্সি এসিড (BHA)
• আলফা হাইড্রক্সি এসিড (AHA)
স্যালিসাইলিক এসিড একটি বিটা হাইড্রক্সি এসিড। বিটা হাইড্রক্সি এসিড তেলের সাথে দ্রবণীয় তাই এটা স্কিনের লিপিড স্তরের ভেতর দিয়ে পোরসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে এবং ক্লোগড পোরস আনক্লগ করে। আলফা ও বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড দুটোই ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে, কিন্তু AHA জলে দ্রবণীয়, অন্যদিকে BHA তেলে দ্রবণীয়।
স্কিন কেয়ারে স্যালিসাইলিক এসিডের ব্যবহার ও উপকারিতা
স্যালিসাইলিক এসিড আমাদের ত্বকের গভীরে যেয়ে ব্রণকে টার্গেট করে এবং ধীরে ধীরে ব্রণকে শুকিয়ে ফেলে। স্যালিসাইলিক এসিডের অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ আছে যেটা রেড পেইনফুল ব্রণ দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। স্কিন কেয়ারে এটির ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন তাহলে।
১) কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে
এটি আমাদের স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করে ডেড স্কিন সেলস রিমুভ করে স্কিনকে সফট করে। অনেক সময় মেকআপ, বাইরের ধুলো ময়লা জমে স্কিনের পোরস ক্লগ হয়ে যায়। স্যালিসাইলিক এসিড পোরস আনক্লগ করতে হেল্প করে।
২) একনে প্রন স্কিনের যত্ন নেয়
আগেই বলেছি, এটি স্কিনের পোরস থেকে পল্যুশন দূর করে। পোরস ক্লিন থাকার ফলে পিম্পলস বা ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ থাকার জন্য অনেক সময় সিস্টিক একনে কমাতেও সাহায্য করে।
৩) ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করে
আমাদের নাকে, গালে, থুতনিতে অনেক সময় ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসের সমস্যা দেখা যায়। স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত কোনো প্রোডাক্টস নিয়মিত ব্যবহার করলে এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ স্যালিসাইলিক এসিড ত্বকের অয়েলিভাব কমিয়ে ভেতর থেকে ত্বক ডিপলি ক্লিন করে এবং ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
যাদের স্যালিসাইলিক এসিড ব্যবহার করা উচিত নয়
স্যালিসাইলিক এসিড বেশি ব্যবহার করলে প্রথমেই যেসব সাইড ইফেক্টস দেখা যায় তা হলো রেডনেস ও এক্সেস ড্রাই স্কিন। অনেকক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি ব্যবহার করলে স্কিন সেনসিটিভ হয়ে যায়। তাই যাদের ড্রাই বা সেনসিটিভ স্কিন, তাদের স্যালিসাইলিক যুক্ত প্রোডাক্টস ব্যবহার না করাই ভালো।
এছাড়াও যারা প্রেগনেন্ট অথবা কোনো মেডিকেশনে আছেন, অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহারের ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। American College of Obstetrics and Gynecologists এর তথ্য অনুযায়ী, প্রেগনেন্সিতে অল্প মাত্রায় স্যালিসাইলিক এসিড ব্যবহার করা সেইফ।
বিগেনার হিসাবে কোন প্রোডাক্টগুলো আমরা ব্যবহার করতে পারবো?
আমাদের ব্রণের জন্য আমরা স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত কোন প্রোডাক্টসগুলো আমরা ব্যবহার করবো তা ডিপেন্ড করবে ব্রণ কম নাকি খুব বেশি তার উপর। সাধারণত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসে ০.৫ থেকে ২% পর্যন্ত স্যালিসাইলিক এসিড ব্যবহার করা হয় এবং এই পরিমাণটাই সেইফ।
স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্লেনজার, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর পাওয়া যায়। বিগেনার হিসাবে টিনএজে একনে প্রন স্কিনের ক্ষেত্রে আমরা স্যালিসাইলিক এসিডযুক্ত একটা ক্লেনজার ব্যবহার করতে পারি। তবে তিনটি জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
১. স্যালিসাইলিক ব্যবহার করলে সানস্ক্রিন মাস্ট লাগাতেই হবে।
২. স্কিন টাইপ অনুযায়ী একটা ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
৩. ২০ বছর বয়স হলে স্কিন কেয়ারে সিরাম রাখতে পারবেন, কিন্তু এর আগে নয়।
আমার এক্সপেরিয়েন্স
আমার অয়েলি অ্যান্ড একনে প্রন স্কিনের জন্য আমি ব্যবহার করি Cosrx Salicylic Acid Daily Gentle Cleanser। এটাতে ০.৫% স্যালিসাইলিক এসিড আছে যা স্কিনের অতিরিক্ত সিবাম কন্ট্রোলের পাশাপাশি ব্রণ কমাতে হেল্প করে। আমি এটা সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন শুধু রাতে ব্যবহার করি। আমার ক্লোজ কমেডোন এর সমস্যা ছিলো যা এই ক্লেনজার দিয়ে অনেক কমে গেছে।
তাহলে, আমরা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছি স্যালিসাইলিক এসিড একনে প্রন স্কিনের জন্য লাইফ সেভার একটা ইনগ্রেডিয়েন্ট। যারা ব্রণ নিয়ে ভুগছেন তারা স্কিন কেয়ারে বিউটি এক্সপার্টের পরামর্শ নিয়ে স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত কোনো প্রোডাক্ট অ্যাড করুন। আর হ্যাঁ, সানস্ক্রিন লাগাতে কিন্তু ভুলবেন না একদম! আপনি চাইলে অনলাইন থেকে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
ছবিঃ সাজগোজ
The post স্কিন কেয়ারে স্যালিসাইলিক এসিডের ব্যবহার ও উপকারিতা জানা আছে কি? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/3JESg1l
0 comments: