অনেক রাত পর্যন্ত পার্টি, বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা সারাদিন কাজের শেষে মেকআপ তোলাটাই যেন সবচেয়ে ক্লান্তিকর একটা কাজ। ক্লান্তিকর মনে হলেও এই একটি অভ্যাসই কিন্তু আপনার ত্বককে ভালো রাখবে। রাতে ঘুমানোর আগে যদি এই কাজটি যদি করা না হয়, তাহলে সৌন্দর্যের জন্য যত কিছুই করা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত কোনো লাভই হবে না। চলুন জেনে নেই মেকআপ তোলা শেষে ত্বকের কী কী উপকার হয়-
রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ পরিষ্কার করার যত উপকারঃ
স্কিন ক্লিন ও অক্সিজেনেটেড থাকে
রাতে ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মেকআপ পরিষ্কার করে ঘুমাচ্ছেন মানে ত্বককে খারাপ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে সুরক্ষা করছেন। মেকআপ তোলা মানে স্কিন প্রোপারলি ক্লিন ও অক্সিজেনেটেড থাকা। মুখ ভালো করে পরিষ্কার না করলে সেলুলার অক্সিজেনেশন (ত্বকে অক্সিজেন প্রবেশ) প্রসেস বাধাগ্রস্ত হয়। খালি চোখে দেখে হয়তো ব্যাপারটি ভালোভাবে বোঝা যায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে স্কিনের ক্ষতি হতে থাকে। তাই রাতের এই স্কিন কেয়ারের মানে আপনি সঠিকভাবে নিজের যত্ন নিচ্ছেন।
প্রিম্যাচিউর এজিং রোধ করে
মেকআপে থাকা বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল উপাদানগুলো স্কিনে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার না করে ঘুমালে স্কিনের পোরসগুলো বন্ধ হয়ে এজিং এর সাইন দেখা দিতে পারে। ঘুমানোর আগে ক্লিন স্কিন নিয়ে ঘুমালে সারা রাত শরীরে নতুন স্কিন সেল তৈরি হয়। এজিং রুখতে যা খুবই জরুরি।
ব্রণের সাথে লড়াই
ত্বকে ব্রণ দেখার সাথে সাথে আঁতকে উঠি আমরা। দোষ দেওয়া শুরু করি ব্যবহার করা নামীদামী সব মেকআপ প্রোডাক্টকে। অথচ ভেবে দেখি না, রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ ঠিকভাবে উঠিয়েছিলাম কিনা! সমস্যা কিন্তু আসলে মেকআপ সামগ্রীতে নয়, রাতে ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার না করায়। ব্রণকে দূরে রাখার জন্য স্কিন পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। মেকআপ যদিও স্কিনের খুঁত ঢেকে রাখে, তবুও রাতে ঘুমানোর আগে সেগুলো তুলে ফেলা উচিত। ত্বকের ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ফেসিয়াল ক্লেনজিং। রাতে ঘুমানোর আগে আপনি যত স্কিন ক্লিন করে ঘুমাবেন তত ব্রণ ওঠার হার কমে যাবে।
ডার্ক সার্কেল রুখে দেয়
চোখ সাজাতে যে আই মেকআপ ব্যবহার করা হয়, সেটি চোখের ডার্কনেস বাড়াতে সাহায্য করে। রাতে এই আই মেকআপ ভালোভাবে ক্লিন করে ঘুমালে ডার্ক সার্কেল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি কমে যায়। কয়েক মিনিট সময় নিয়ে চোখের মাশকারা আর আই মেকআপ তুলে ফেলুন, দেখুন নিজেকে কতটা ফ্রেশ আর ইয়ং লাগছে!
চোখে ইনফেকশন হওয়া থেকে সুরক্ষা
মেকআপ মানেই চোখের জন্য আলাদা সাজসজ্জা। স্মোকি আই অথবা কালারফুল শ্যাডো দিয়ে সাজানো হয় চোখ। মেকআপ করার সময় সাজানো চোখ ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। আর এ জন্য অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে চোখের মেকআপ উঠিয়ে ফেলতে হবে। পাপড়িতে লাগানো মাশকারা থেকে শুরু করে শ্যাডো- এর কোনো একটি অংশ যদি চোখের ভেতরে ঢুকে যায় তাহলে চোখে ইরিটেশন, চোখ লাল হওয়াসহ নানা ধরনের ইনফেকশন হতে পারে। তাই চোখের মেকআপ তুলে ফেলার অর্থ হচ্ছে চোখকেও ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রুখে দিচ্ছেন আপনি।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
ত্বক থেকে মেকআপ তুলে ফেলা মানে ত্বকে সঠিকভাবে অক্সিজেন আর নিউট্রিশন প্রবেশ করার পদ্ধতি সহজ করে দেওয়া। এছাড়াও বাড়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা। মেকআপ নিয়মিত না তুললে আপনি নিজেই খেয়াল করবেন ত্বক কেমন ডাল আর ডিহাইড্রেটেড দেখাচ্ছে।
দুর্বল ও ভঙ্গুর আইল্যাশের সম্ভাবনা কমে যাওয়া
চোখ সাজাতে মাশকারার ব্যবহার হয় নিয়মিত। সাজ সম্পন্ন করার জন্য মাশকারা ব্যবহার করছেন এতে কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন আপনি চোখ চোখের এই মাশকারা ভালো করে পরিষ্কার না করেই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বারবার এমন হলে ডিহাইড্রেশন বেড়ে যায়, যার কারণে চোখের হেয়ার ফলিকল দুর্বল হতে থাকে। এতে ধীরে ধীরে পাপড়ি দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়া শুরু হয়। এই পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে চাইলে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে মাশকারা উঠিয়ে ফেলতে হবে।
ঠোঁটের কোমলতা বাড়ে
মুখের ত্বকের অন্যান্য জায়গার চেয়ে ঠোঁটের আশপাশ কিন্তু বেশি কোমল হয়। ঠোঁট কোমল ও হাইড্রেটেড রাখতে প্রয়োজন বাড়তি একটু যত্নের। যদি লিপস্টিক রিমুভ না করা হয়, তাহলে ঠোঁট ময়েশ্চার হারায়, শুষ্ক হয়ে যায়, দেখে মনে হয় চামড়া উঠে যাচ্ছে। রাতে ঘুমানোর আগে যখনই আপনি লিপস্টিক তুলে ঘুমাচ্ছেন, তার মানে ঠোঁটকে নিজের মতো ময়েশ্চারাইজড থাকতে এবং কোমল রাখতে সাহায্য করছেন।
রিংকেল পড়ার সম্ভাবনা কমে
মেকআপ না তুলে ঘুমালে ত্বকের ইলাস্টিসিটি কমতে থাকে, ফলে সেল রিজেনারেট কমে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে দেখা দেয় রিংকেলস। এই সমস্যায় না পড়তে চাইলে ঘুমানোর আগে মেকআপ খুব ভালোভাবে তুলে ফেলা জরুরি। এতে আপনি নিজেই ত্বকের সফটনেস বুঝতে পারবেন ঘুম থেকে উঠে।
স্কিন অ্যালার্জি থেকে দূরে
দীর্ঘ সময় মেকআপের বিভিন্ন উপাদান ত্বকে লেগে থাকায় স্কিন অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যায়। কিন্তু প্রতি রাতে যত আপনি ত্বককে আরাম দেবেন, ততই ডার্মাটিটিস বা একজিমার মতো সমস্যা দূরে থাকবে।
পরের দিনের রুটিন সহজ হয়
আগের রাতে যদি ফেসিয়াল কেয়ার ভালোভাবে করা হয়, তাহলে পরেরদিন বিউটি রুটিন শুরু করা সহজ হয়। ঘুম থেকে যখন আপনি পরিষ্কার ত্বক নিয়ে উঠছেন, তখন দিনের শুরু থেকে ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং, নতুন করে মেকআপের ব্যবহার সবকিছু সুন্দর করে করা সহজ হয়।
আপনি কি তাদের মধ্যে একজন যিনি রোজ রাতে মেকআপ না উঠিয়ে ঘুমাচ্ছেন? এর উত্তর যদি হ্যা হয়, তাহলে এই বদভ্যাস বদলে ফেলুন এখনই! শুধু ফেইস ওয়াশ দিয়ে কখনোই মেকআপ রিমুভ করবেন না। ভালোমানের মাইসেলার ওয়াটার, ক্লেনজিং অয়েল বা ক্লেনজিং বাম দিয়ে আগে মেকআপ তুলে নিন। এরপর ওয়েট ওয়াইপস দিয়ে মেকআপ রিমুভ করে ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে টোনার ও ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। নিজের ত্বকের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। আপনি চাইলে অনলাইন থেকে আপনার পছন্দমতো প্রোডাক্ট কিনতে পারেন শপ.সাজগোজ.কম থেকে। আবার যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ থেকেও কিনতে পারেন আপনার পছন্দের প্রোডাক্টটি!
ছবিঃ সাজগোজ
The post রাতে ঘুমানোর আগে কেন মেকআপ পরিষ্কার করবেন? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/3sGipad
0 comments: