অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা চুলের তুলনায় ত্বকের যত্ন বেশি করি। আপনি জানেন কি? ত্বক যেমন সৌন্দর্যের একটি অংশ, তেমনি আমাদের চুলও আমাদের সৌন্দর্য বাড়াতে সমান গুরুত্ব বহন করে। এজন্য প্রতিদিন না হোক, সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেপগুলো অবশ্যই ফলো করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একটা দিন তো সেলফ প্যামপার করা যেতেই পারে, তাই না? ছুটির দিনে নিজেকে একটু সময় দিন, সুন্দর ত্বক ও চুলের জন্য একটু এক্সট্রা কেয়ার তো করা লাগেই! অনেকেরই কনফিউশন আছে যে কীভাবে চুলের বাড়তি যত্ন নেওয়া যায়! তাই সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিন সম্পর্কে আজ আমরা বিস্তারিত জানবো।
সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেপস
রেগুলার হেয়ার কেয়ারের পাশাপাশি আমরা যখন সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার করি, তখন কিছু ধাপ আছে যা আপনাকে অবশ্যই ফলো করতে হবে। সুস্থ, সুন্দর ও ঝলমলে চুল পেতে এই স্টেপগুলো বাদ দিলে চলবে না। চলুন তাহলে দেখে নেই সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিনের ধাপগুলো কী কী।
হট অয়েল ম্যাসাজ
সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিনে প্রথমেই যে স্টেপটি ফলো করবেন সেটি হলো হট হেয়ার অয়েল ম্যাসাজ। হট হেয়ার অয়েল ট্রিটমেন্টের উপকারিতা হলো-
- চুলকে সিল্কি এবং চুলের গোড়া শক্ত করে। সেই সাথে হেয়ারের গ্রোথ বাড়ায়।
- ব্লাড সারকুলেশন স্বাভাবিক করে হেয়ার কিউটিকলের মাধ্যমে ভিটামিন এবং প্রোটিন সরবরাহ করে।
- অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে অয়েল উৎপন্ন করে চুলকে নারিশড করে। এতে করে চুলকে খুশকি হতে রক্ষা করে। কেমিক্যাল ট্রিটেট চুলে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে।
- স্ক্যাল্পকে ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকমুক্ত রাখে।
- নার্ভকে রিলাক্স করে। এতে আপনি আরাম বোধ করবেন।
হট অয়েল ম্যাসাজ যেভাবে করবেন
হট অয়েল ম্যাসাজে কার্যকরী রেজাল্ট পেতে চাইলে এভাবে প্রসেসগুলো ফলো করবেন-
ডাবল বয়লারে তেল গরম করুন
একটি হিট সেইফ বাটিতে আপনার পছন্দ মত যেকোনো ক্যারিয়ার তেল ( নারিকেল/অলিভ অয়েল) ২/৩ টেবিল স্পুন ঢেলে নিবেন। আরেকটি পাত্রে পানি নিয়ে তার উপর তেলসহ হিট সেইফ বাটি বসিয়ে চুলায় চড়িয়ে দিন। ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করুন, খেয়াল রাখবেন তেল যাতে মাত্রাতিরিক্ত গরম না হয়ে যায়।
চুলকে ছোট ছোট সেকশনে ভাগ করে নিন
- আপনার যদি ঘন চুল হয় তবে চুলকে ভালোভাবে চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে নিন। এক্ষেত্রে কাঠের চিরুনি বেস্ট অপশন।
- চুলকে ২ টা সেকশনে ভাগ করে সামনে আনুন। এই দুই ভাগকে পুনরায় ২ ভাগে ভাগ করে নিন।
- যে ভাগটায় তেল অ্যাপ্লাই করবেন সেটা বাদে বাকিগুলো রাবার ব্যান্ড বা ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে নিন।
- এখন চুলের তালু থেকে নিচের দিকে যেতে যেতে গরম তেলটি আস্তে ধীরে অ্যাপ্লাই করে নিন।
- আঙ্গুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করে নিন। এভাবে বাকি সেকশনগুলোতেও তেলটি ব্যবহার করুন। চুলের নিচের দিকে অর্থাৎ চুলের আগায় পর্যাপ্ত পরিমানে তেল ব্যবহার করতে ভুলবেন না!
শাওয়ার ক্যাপ ব্যবহার করুন
একটি পরিস্কার শাওয়ার ক্যাপ বেছে নিন। ক্যাপ দিয়ে পুরো মাথার চুল কভার করে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এছাড়াও আপনি মাথায় সারারাত তেল রাখতে পারবেন।
**ছোট্ট একটি টিপস!
চুলে অতিরিক্ত ময়েশ্চার চাইলে, একটা গরম তোয়ালে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট মাথা মুড়িয়ে রাখুন। এসময় আপনার প্রিয় গানগুলো শুনতে পারেন!
গোসলের সময় চুল ধুয়ে নিন
আপনার পছন্দ মত শ্যাম্পু দিয়ে চুল খুব ভালো করে ওয়াশ করে নিন। এছাড়াও একটি ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না!
**ছোট্ট একটি টিপস!
চুল শ্যাম্পু দিয়ে একবার পরিস্কার করলে আপনার মনে হতে পারে যে চুলে এখনো তেল আছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার শ্যাম্পু করে নিন।
হেয়ার মাস্কের ব্যবহার
হেয়ার মাস্ক হলো এক ধরণের হেয়ার ট্রিটমেন্ট যা আপনার চুলের যেকোনো স্পেসিফিক সমস্যার সল্যুশন দিতে হেল্প করে। চুলের ধরণ, স্ক্যাল্পের সমস্যার ধরণ বুঝে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা হয়। হেয়ার মাস্ক ২ ধরণের হয়ে থাকে।
চলুন জেনে নেয়া যাক রকমফের ও ব্যবহারের নিয়মবিধিঃ
প্রাকৃতিক হেয়ার মাস্ক
এক ধরণের মাস্ক যা হোমমেড বা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি যেমনঃ ডিম, দই ,মেথি, আমলা দিয়ে তৈরি মাস্ক। এটি “প্রি-শ্যাম্পু মাস্ক” হিসেবে পরিচিত। কারণ, এ ধরণের মাস্ক চুল শ্যাম্পু করার আগে ব্যবহার করতে হয়।
প্রাকৃতিক হেয়ার মাস্কের কয়েকটি রকমফের আছে-
হেনা মাস্কঃ হেনা মাস্ক চুলকে রং করার পাশাপাশি চুলের গোঁড়া শক্ত করতে সাহায্য করে। তবে এই মাস্কের সাথে শিকাকাই ও আমলা গুঁড়া ব্যবহার করলে আরও ভালো ফলাফল পাবেন।
ডিমের মাস্কঃ চুলের তেলতেলে ভাব কমায় ও চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করে।
আমলকির মাস্কঃ চুল পড়ায় ও খুশকি কমায়। সাথে মেথি ও টকদই ব্যবহার করলে ভালো। চুলের বৃদ্ধির পাশাপাশি টকদই চুলকে ময়েশ্চারাইজড করে।
শিকাকাই মাস্কঃ এটি চুলের রুক্ষতা দূর করে ও প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
পেঁয়াজের মাস্কঃ পেঁয়াজের রস নতুন চুল গজাতে খুব উপকারি। আপনার মাথায় চুল কম থাকায় যদি হতাশায় ভুগেন তবে পেঁয়াজের রস দিয়ে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
কলা ও মধুর মাস্কঃ কেমিক্যাল ট্রিটেড চুলের ড্যামেজ কমিয়ে আনে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
- চুলকে ছোট ছোট সেকশনে ভাগ করে একটি ব্রাশের সাহায্যে অল্প অল্প করে মাস্ক অ্যাপ্লাই করে নিন।
- ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট মাস্কটি চুলে রাখুন। তবে, আপনি যদি মেহেদি প্যাক চুলের রং করার জন্য লাগিয়ে থাকেন তবে রং বসাতে হলে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
- চুল খোঁপা করে একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুলকে কভার করে নিন।
- পানি দিয়ে বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ওয়াশ করে নিবেন।
ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক
আরেক ধরনের মাস্ক হলো ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক। আপনি চুল শ্যাম্পু করার পরেও এই মাস্ক ব্যবহার করতে পারবেন। এই মাস্ক “হাইড্রেশন মাস্ক” হিসাবেও পরিচিত। কারণ, এটি রুক্ষ চুলের যত্ন নিতে ব্যবহার করলে চুলের ফ্রিজিনেস দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি-
- ড্রাইনেস দূর করে চুলকে ঝলমলে ও মসৃণ করে তোলে।
- আপনার চুল যদি ইতোমধ্যে কেমিক্যাল ট্রিটেট হয়ে একদম ড্যামেজ হয়ে যায়, তবে ড্যামেজ রিপেয়ারে হেল্প করে।
- ডিপ কন্ডিশনের পাশাপাশি আপনার চুলে যদি কালার থাকে তবে কালার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ড্রাই চুল, কার্লি চুল, কেমিক্যাল দেয়া ও রিবন্ডিং চুলের জন্য বেশি ভালো হবে, তবে সব ধরণের চুলেই ব্যবহার করা যাবে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক
আমি যে প্রসেসটি ফলো করি, আজকে আপনাদের আমি সেই প্রসেসটাই জানাবো। চলুন জেনে নিই-
- কন্ডিশনার আমরা কানের নিচ থেকে চুলের আগা পর্যন্ত যেভাবে অ্যাপ্লাই করি, ঠিক সেভাবেই একটি ব্রাশ দিয়ে অ্যাপ্লাই করবেন।
- ন্যূনতম ৫ মিনিট বা আপনার চুলের ড্যামেজ বেশি হলে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট মাস্কটি চুলে রেখে অপেক্ষা করুন।
যে বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন-
- চুলের নিচের দিকে মাস্ক বেশি করে অ্যাপ্লাই করবেন, কারণ চুলের আগায় ড্যামেজ বেশি হয়।
- সপ্তাহে একবার, তবে চুলে বেশি ড্যামেজ থাকলে ২ বার ব্যবহার করুন।
আরও যে স্টেপসগুলো ফলো করবেন
- চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। যেমনঃ আপনার চুল রুক্ষ হলে হাইড্রেশন দিবে এরকম শ্যাম্পু কিংবা আপনার চুলে অনেক খুশকি থাকলে অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।
- শ্যাম্পুর পাশাপাশি কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
- গোসলের পর ভেজা চুলে একটি হেয়ার সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
হেলদি চুল পেতে কিছু টিপস যা না মানলেই নয়
আপনি আপনার চুলের যত্নে যতই রুটিন ফলো করেন না কেন, আপনি যদি কিছু বিষয় মেনে না চলেন তবে সব কষ্ট বিফলে যাবে। তাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-
- চুলে গরম পানি দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
- দিনে ২ থেকে ৩ বার চুল আঁচড়াবেন।
- সিল্ক বা সার্টিনের বালিশের কভার ব্যবহার করবেন।
- পর্যাপ্ত পরিমানে পানি খাবেন, ফল-মূল, সবজি খাবেন।
- ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন।
- দুশ্চিন্তামুক্ত থাকবেন।
চুলের যত্নে এই সাপ্তাহিক রুটিনটি ফলো করতে পারেন। আশা করি এখন থেকে সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেপগুলো সঠিকভাবে ফলো করতে পারবেন। সুন্দর চুল পেতে রেগুলার হেয়ার কেয়ারের সাথে সাথে সপ্তাহে অন্তত একটি দিন চুলের এক্সট্রা কেয়ার করতে ভুলবেন না! আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত, সেখান থেকে চুলের যত্নের জন্য হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টগুলো কিনতে পারেন আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন।
ছবি- সাজগোজ
The post সাপ্তাহিক হেয়ার কেয়ার রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ স্টেপগুলো ফলো করছেন তো? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/3AgUoHV
0 comments: