স্কিন কেয়ারের প্রয়োজনীয়তা, স্কিন কেয়ার রুটিন অনুযায়ী কত রকমের প্রোডাক্টস সবইতো বুঝলাম। কিন্তু আমার স্কিনের সমস্যাকে টার্গেট করে কোন প্রোডাক্টটি সবচেয়ে ভাল সল্যুশন দিবে তা বুঝে উঠাইতো মুশকিলের ব্যাপার। আমার সাথে এমন প্রায়ই হয়। আপনাদের সাথেও হয়েছে নিশ্চয়ই! তাই না? স্কিন কেয়ারের যেই প্রোডাক্টটি নিয়ে কম বেশি আমরা সবাই বেশ কনফিউজড হই তা হল, ফেইস সিরাম! টিনএজ পার করার পর পর স্কিন কেয়ারে সিরাম ব্যবহার করাটা জরুরি, এতে খুব পাওয়ারফুল ইনগ্রেডিয়েনন্টস থাকে, যা আমাদের স্কিনের স্প্যাসিফিক কিছু সমস্যাকে টার্গেট করে কাজ করে। সবইতো বুঝলাম! কিন্তু, কোন সিরামটি আপনার জন্যে কীভাবে বুঝবেন? সিরামে থাকা কোন ইনগ্রেডিয়েনন্টস এর কাজ কি সেটা আমরা অনেকেই জানি না। তাই, আজকে আমরা জেনে নিব, কোন ইনগ্রেডিয়েনন্টস থাকলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন তা আপনার কোন সমস্যার সল্যুশন দিতে পারবে তা নিয়ে।
প্রথমেই ছোট্ট করে জেনে নেই, সিরামের কাজ কী?
সিরাম হচ্ছে মূলত হাইলি কনসেনট্রেটেড পাওয়ারফুল ইনগ্রেডিয়েন্টগুলোকে অনেক লাইট বা থিন ফর্মুলার আকারে তৈরি করা হয়। ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো আমাদের স্কিনের কোনো স্পেসিফিক প্রবলেমকে টার্গেট করে কাজ করে। সিরাম আমাদের স্কিনের একদম ভেতরের লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। তাই এটি আমাদের ত্বকে খুব দ্রুত কাজ করে। রেগুলার স্কিন কেয়ারের পাশাপাশি স্কিনের কমন কিছু প্রবলেমস যেমন-
•স্পট বা পিগমেন্টেশনের সমস্যা
•সান ট্যান
•ব্রণের দাগ
•আন ইভেন স্কিন টোন
•রিঙ্কেলসের সমস্যা
এই সমস্যাগুলোকে টার্গেট করে সমাধান দিতে কাজ করে সিরাম।
সিরামে থাকা ইনগ্রেডিয়েনন্টস এবং সমস্যার সল্যুশন
একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে স্কিন কেয়ার রুটিনে সিরাম রাখাটা মাস্ট। ফেইসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার বা স্ক্রাবের মত সিরামও শখের চেয়ে আমাদের স্কিনের জন্যে প্রয়োজনটাই বেশি হয়ে পরে। কোন সিরামটি আপনার জন্যে এবং আপনার সমস্যাকে টার্গেট করে কাজ করবে তা বুঝতে পারাটা জরুরি। পাশাপাশি কোন ইনগ্রেডিয়েনন্ট কী কাজ করে তা না জেনে প্রোডাক্ট ইউজ করাটাও উচিৎ নয়। তাই চলুন জেনে নেয়া যাক, কীভাবে বুঝবেন কোন সিরামটি আপনার জন্যে তা নিয়ে।
(১) সিরামে থাকা “নিয়াসিনামাইড” এর কাজ কী?
• মূলত, ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশনকে বুস্ট করতে সাহায্য করে এই নিয়াসিনামাইড।
• নিয়াসিনামাইড ‘সিরামাইড’নামের লিপিড তৈরিতে সাহায্য করে, যা আমাদের স্কিনের বাইরের প্রোটেক্টিভ লেয়ারটাকে মেনটেইন করে।
• রিঙ্কেলস আর ফাইন লাইন্স কমিয়ে আনতে হেল্প করে।
• যাদের ওপেন পোরস এর সমস্যা রয়েছে। এটি পোরস মিনিমাইজ করতে হেল্প করে।
• স্কিনকে স্মুথ, ময়েশ্চারাইজড আর হেলদি রাখে।
• যাদের স্কিন অতিরিক্ত অয়েলি, নিয়াসিনামাইড স্কিনের সেবাম প্রডাকশন কনট্রোল করতে হেল্প করে।
• স্কিনের রেডনেস কমিয়ে আনতে হেল্প করে।
• স্কিনকে একদমই সান সেনসিটিভ করে না।
• একনে বা ব্রণ দুর করতে সাহায্য করে।
তাই, যাদের স্কিন অতিরিক্ত অয়েলি, ওপেন পোরস এর সমস্যা রয়েছে, মুখে বয়সের ছাপ পরে যাচ্ছে বা ব্রণের প্রবণতা রয়েছে তারা খুব সহজেই নিশ্চিন্তে নিয়াসিনামাইড আছে এমন সিরাম সিলেক্ট করে স্কিন কেয়ারে রাখতে পারেন।
(২) সিরামে থাকা “আলফা আরবিউটিন” এর কাজ কী?
• আলফা আরবিউটিন একটি সেইফ ব্রাইটেনিং ইনগ্রেডিয়েন্ট। এটি আমাদের ফেইসের হাইপার-পিগমেন্টেশন বা পিগমেন্টেশন এর মত সমস্যার চমৎকার সল্যুশন দিতে পারে।
• স্কিনের ডার্ক স্পট বা নানা রকম দাগ কমাতে হেল্প করে।
• স্পট কমিয়ে স্কিনকে ব্রাইট করে। ন্যাচারাল গ্লো আনতে সাহায্য করে।
• স্কিনকে আনইভেন থেকে ইভেন করতে হেল্প করে।
• ফেইসের একনে স্কারস বা পুরানো দাগ কমিয়ে আনে।
• যাদের ফেইসে ব্লেমিশ বা রেডনেস এর সমস্যা আছে, তাদের জন্যে এটি বেস্ট চয়েজ।
• সেনসিটিভ স্কিন যাদের তারাও এটি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
“আলফা আরবিউটিন” এই ইনগ্রেডিয়েনন্ট এর নামটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু অনেকেই জানি না, আমাদের স্কিনে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দিলে আলফা আরবিউটিন যুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে হবে। তাই, মুলত যাদের ফেইসে নানা রকম স্পট বা দাগ রয়েছে তা কমিয়ে আনতে আলফা আরবিউটিন যুক্ত সিরাম হতে পারে রাইট চয়েজ।
(৩) সিরামে থাকা “ভিটামিন সি” এর কাজ কী?
• স্কিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ও ড্যামেজ রিপেয়ার করতে ভিটামিন সি বেশ হেল্পফুল। আমাদের ড্যামেজড স্কিন সেলগুলোকে রিপেয়ার করার জন্য ভিটামিন সি কাজ করে।
• বয়সের ছাপ দূর করতে হেল্প করে।
• স্কিনের মেলানিন প্রোডাকশন কমিয়ে এনে, স্কিনে ন্যাচারাল গ্লোয়িং ইফেক্ট দেয়।
• স্কিনের নানা রকম দাগ কমাতে সাহায্য করে।
• ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
• স্কিনকে করবে স্মুথ।
স্কিন কেয়ারে ভিটামিন সি খুবই কার্যকরী একটি ইনগ্রেডিয়েন্ট। তাই যাদের স্কিনের গ্লো হারিয়ে গেছে, ফ্যাকাসে বা মলিন হয়ে গেছে, নানা কারণে ড্যামেজ হয়ে গেছে তারা চেষ্টা করবেন ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে।
(৪) সিরামে থাকা “ল্যাকটিক অ্যাসিড” এর কাজ কী?
• ল্যাকটিক অ্যাসিড এর প্রধান কাজই হল, অ্যান্টি এজিং এর কাজ করা। যাদের রিংকেলস এর সমস্যা আছে তাদের জন্যে এটি হতে পারে চমৎকার সল্যুশন।
• স্কিনের ডেড সেল গুলোকে ভেঙ্গে দেয়। ভেঙে যাওয়া ডেড সেলগুলো অনেকটা খুশকির মত উঠে উঠে আসে। তাই, বলা যায় এটি অনেকটা পিলিং সিরাম এর মতই কাজ করে।
• স্কিনে স্ক্রাবিং এর মত কাজ করে থাকে।
• ব্রণের দাগ দুর করতে হেল্প করে।
• যাদের ফ্রেকেলস এর সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্যে এটি বেস্ট একটি সিরাম।
• ঠোঁটের পাশে যাদের কালচে দাগ রয়েছে, তা দুর করতে হেল্প করে।
• মুখে পুরানো অনেক দিনের দাগ বা পিগমেন্টেশনের প্রবলেম কমিয়ে আনে।
ল্যাকটিক অ্যাসিড খুবই পাওয়ারফুল একটি ইনগ্রেডিয়েন্টস। যেহেতু এটি পিলিং এবং স্কিনে স্ক্রাবিং এর কাজ করে থাকে, তাই সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বারের বেশি ব্যবহার করা উচিৎ নয়। ভালো রেজাল্ট পাওয়ার জন্যে যেকোন একবেলা অ্যাপ্লাই করলেই যথেষ্ট। সাধারণত রাতের বেলা অ্যাপ্লাই করাই ভাল।
(৫) সিরামে থাকা “স্যালিসাইলিক অ্যাসিড” এর কাজ কী?
• স্যালিসাইলিক এসিড ব্রণ, গুটি গুটি দানা, ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস দুর করার জন্য একটি ইফেক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট।
• স্যলিসাইলিক এসিড আমাদের স্কিনে কেরাটোলাইটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
• স্কিন এর কেরাটিন লেয়ারকে ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ক্লাম্পড ডেড সেল গুলো ডিসল্ভ করে ফেলে।
• এতে করে জমে থাকা ডেড সেল সহজেই এক্সফোলিয়েট করা হয়ে যায়।
• স্যালিসাইলিক এসিড আমাদের স্কিনের লিপিড লেয়ারের ভেতরে গিয়ে অতিরিক্ত সিবাম প্রডাকশন কমিয়ে দেয়। ফলে যাদের অতিরিক্ত অয়েলি স্কিন তাদের স্কিনের অয়েল প্রোডাকশন কমিয়ে আনে।
• স্যালিসাইলিক এসিড স্কিনের ভিতরের সিবাম পেনিট্রেট করে ডেড সেল গুলো ক্লিন করতে হেল্প করে। তাই সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়, ব্রণ বা গুটি গুটি দানার সমস্যা থেকে।
ব্রণ নিয়ে ভোগান্তি হয়নি এমন মানুষ বোধহয় খুঁজেই পাওয়া যাবে না। তাই, যাদের পিম্পল, ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস এর মত সমস্যা রয়েছে এবং কপালে গুটি গুটি দানা বা বাম্পস এর মত সমস্যা রয়েছে তারা স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখুন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড যুক্ত সিরাম।
(৬) সিরামে থাকা “হায়ালুরনিক অ্যাসিড” এর কাজ কী?
• সময়ের সাথে সাথে আমাদের স্কিনের চামড়াও বুড়িয়ে যেতে থাকে। হায়ালুরনিক অ্যাসিড ত্বকের এই সমস্যা সমাধানে কাজ করে এবং অকালে ত্বকে বয়সের ছাপ পরে যাওয়ার মত সমস্যা প্রতিরোধ করে।
• স্কিনের ফাইন লাইনস, রিংকেলস এর সমস্যা কমিয়ে আনে।
• ত্বকের ডালনেস, খসখসে ভাব কমিয়ে আনে।
• ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।
• স্কিন হাইড্রেটেড না থাকলে তা একসময় হয়ে পরে ড্রাই। ড্রাই স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখতে কাজ করে এটি।
• হায়ালুরনিক অ্যাসিড বাইরের পরিবেশ থেকে পানি টেনে আমাদের স্কিনে সাপ্লাই দেয়। তাই, যাদের ড্রাই স্কিন তাদের জন্যে এটি স্কিন কেয়ারে রাখা মাস্ট।
আমাদের স্কিনের লেয়ার তৈরি করতে যেই ইনগ্রেডিয়েন্টসগুলো সবচেয়ে বেশি কাজ করে তার মধ্যে হায়ালুরনিক অ্যাসিড অন্যতম।
তবে, দিনের বেলা সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই মাস্ট
স্কিনের সমস্যা অনুযায়ী স্কিন কেয়ারে যেই সিরামই রাখুন না কেন, দিনের বেলা সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই কিন্তু মাস্ট! কোনভাবেই এটি আপনার ডে-কেয়ার স্কিন রুটিন থেকে স্কিপ করা যাবে না। আপনি দিনে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে রাতে শুধু সিরাম ব্যবহার করতে থাকেন, তবে কিন্তু তেমন কোন একটা লাভ হবে না।
আচ্ছা! সিরাম প্রতিদিন কতবার ব্যবহার করতে পারবো?
অনেকেই আবার ভাববেন না যেন, একসাথে ৩/৪ টা সিরাম একদিনে ব্যবহার করলে সব সমস্যার সল্যুশন একসাথে পেয়ে যাবেন। প্যাকেটের গায়ে যদিও লিখা থাকে, প্রতিদিন দিনে এবং রাতে দুইবার করে সিরাম ব্যবহার করা যাবে। তবে, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রতিদিন একবারের বেশি ব্যবহার না করাই ভাল। তবে খুব বেশি পাওয়ারফুল ইনগ্র্যাডিয়েন্ট না হলে দিনে একবার এবং রাতে একবার ব্যবহার করা যাবে।
প্রত্যেকবার কতটুকু পরিমাণে সিরাম ইউজ করবো?
অনেকেই আছেন যারা হাত ভরে ভরে সিরাম নিয়ে অ্যাপ্লাই করে। অনেকে আবার দাম বেশি বলে একদম খুব অল্প পরিমাণে নিয়ে ব্যবহার করে। তবে, সিরাম কখনোই ৪ থেকে ৫ ড্রপের বেশি ব্যবহার করবেন না। গলায় সিরাম ব্যবহার করলে এক্সট্রা ২ থেকে ৩ ড্রপ বেশি অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৬ থেকে ৮ ড্রপ নিলেই যথেষ্ট।
সিরামে ব্যবহিত হওয়া নানা ইনগ্র্যাডিয়েন্টগুলোর মধ্যে উপরের ইনগ্র্যাডিয়েন্টসগুলো অনেক বেশি পরিচিত এবং কার্যকরী। আশা করছি আজকের লিখাটি পরে যারা কোন সিরামটি কিনবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না! তাদের কিছুটা হলেও হেল্প হবে। ২১/২২ বছরের আগে সিরাম ব্যবহার না করাই ভাল। আর সিরাম ব্যবহারের শুরুতে নিয়াসিনামাইড বা আলফা আরবিউটিন রুটিনে রাখতে পারেন। এবং অবশ্যই সিরাম ব্যবহারের পর একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না!
স্কিন ও হেয়ার কেয়ারের জন্য অথেক্টিক প্রোডাক্ট আপনারা চাইলে সাজগোজের দুটি ফিজিক্যাল শপ ভিজিট করতে পারেন, যার একটি যমুনা ফিউচার পার্ক ও অপরটি সীমান্ত সম্ভারে অবস্থিত। আর অনলাইনে কিনতে চাইলে শপ.সাজগোজ.কম থেকে কিনতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিজের ব্যপারে সচেতন হবেন।
ছবি- সাজগোজ
The post কোন সিরামটি আপনার জন্যে কীভাবে বুঝবেন? appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/3vTyVTc
0 comments: